বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪১
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৪১

  মা মোর পবন তব চামর ব্যজনে যেন যায়,
  হোমাগ্নিতে মম অগ্নি যেন মিশায়।
আমার জল যেন যায় পদ্মজলে, যেন তবে যায় বিমলে,
  দাশরথীর জীবন-মরণ দায়।”

 এই গানটিতে বৈষ্ণব আত্ম-সমর্পণের ভাব থাকিলেও, অত্যন্ত দুঃখ, নিবৃত্তি বা মুক্তির ভাব কিছু আছে। বৈষ্ণবেরা আনন্দময়ের খেলার খেঁড়ু হইয়া থাকিতে চান, তাঁহারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হইতে চান না। কিন্তু দাশরথী জীবন-মরণ—এই দুই হইতেই মুক্তি চাহিতেছেন। বৈষ্ণব যে আনন্দময় পুরুষবরের আনন্দের স্বাদ পাইয়াছেন, সেই পুরুষের সঙ্গ তিনি চিরন্তন কালের জন্য কামনা করেন। শাক্ত কিন্তু—‘যথা জলের বিম্ব জলে বিলয়’ সেই ভাবে আপনাকে ফুরাইয়া ফেলিয়া নিষ্কৃতি প্রার্থনা করেন—এই প্রভেদ।

 গোবিন্দ দাসের আর একটি পদে সেই সুন্দর পুরুষবরের যে রূপ-বর্ণনা আছে, উহার প্রত্যেকটি অক্ষর হইতে কবিত্বের জ্যোতিঃ ফুটিতেছে। যে পদ দিয়া তিনি যান, তাঁহার চরণস্পর্শে সেইস্থলে স্থলপদ্ম ফুটিয়া উঠে। (যাঁহা যাঁহা অরুণ চরণ চলই, তাঁহা তাঁহা খল-কমল খলই)। যেখানে তাঁহার ভ্রভঙ্গিতে চঞ্চল কটাক্ষ খেলিয়া যায়,–“তাঁহা তাঁহা উছলই কালিন্দহিল্লোল”। যেখানে তিনি প্রসন্ন দৃষ্টিতে চান—সেখানে যেন নীলোৎপল ফুটিয়া ওঠে। যেখানে তাঁহার মধুর হাস্য বিকশিকত হয় তাঁহা—“তাঁহা কুন্দকুমুদপরকাশ”।

 বৈষ্ণব কবির মত ভগবানের অপূর্ব্ব রূপ আর কাহার চক্ষে এরূপ ভাবে ধরা পড়িয়াছে! আমরা রাধার পাদ-পদ্মের কথা একবার উল্লেখ করিয়াছি, এই বিষয়ের কবিতাগুলি ভক্তি ও প্রেমে ভরপুর।