পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৪১

 যশোদার এই বাৎসল্য অতুলনীয়। কংস-ধ্বংসকারী, বক-কিস্মির-কালীয়-বিধ্বংসী, পুতনারাক্ষসীর স্তনসহ প্রাণ-শোষণকারী, যমলার্জ্জুনোৎপাটক পরম পুরুষবরকে তিনি যে চক্ষে দেখিয়াছেন, তাহা মাতৃ-স্নেহের প্রতীক। মাতা জগজ্জয়ী বীর পুত্রকেও শিশু বলিয়াই মনে করেন। যিনি জগতে মহাবিপ্লব ঘটাইয়া শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপন করিয়াছেন, তিনিও মায়ের কাছে শিশু, তাঁহার ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও আধি-ব্যধি দূর করিবার কথাই শুধু তিনি দিনরাত চিন্তা করেন। যদি মুহূর্ত্ত-কালের জন্য তিনি পুত্রের শৌর্য্য-বীর্য্যের কথা স্মরণ করেন, তখন জগৎপালনকারী রস-শ্রেষ্ঠ বাৎসল্য আর তাঁহার মনে স্থান পাইতে পারে না। ভগবানের পালনী-শক্তির মূর্ত্ত প্রকাশ সন্তানের প্রতি মমতার অবসান হইলে জগৎ-রক্ষার প্রধান আশ্রয় ভাঙ্গিয়া পড়ে, কুটীরের প্রধান অবলম্বন শালের খুটিটীর অস্তিত্বের বিলোপ হয়। বৈষ্ণব কবিরা সেরূপ রস-ভঙ্গ করেন নাই। একদিন মাত্র যশোদা মুহূর্ত্তের জন্য বিন্দুর মধ্যে প্রতিবিম্বিত ষড়ৈশ্বর্য্যশালী বিশ্ব-রূপের প্রকাশ বুঝিতে পারিয়া স্নেহ-রিক্তা ও বিস্মিতা হইয়া জগৎ অন্ধকার দেখিয়াছিলেন; তাঁহার ক্রোড়ের অতি ক্ষুদ্র শিশুটির মধ্যে বিশ্ব-শক্তির স্বরূপ দেখিয়া তিনি অধীর হইয়া পড়িয়াছিলেন, এজন্য বাল-গোপাল হাঁ করিয়া মাতাকে যাহা দেখাইয়া চমৎকৃত করিয়াছিলেন, সে রূপ তিনি তখনই সম্বরণ করিলেন।

 গৌরদাসের মুখে এই গোষ্ঠ শুনিতে শুনিতে ভগবানকে কিরূপে সখ্য-ভাবে পাওয়া যায়, তাহা আমি আভাসে বুঝিয়াছিলাম। জগৎ তাঁহার লীলাস্থল, সম্পূর্ণরূপে তাঁহার উপর নিজকে ছাড়িয়া দিয়া, তাঁহাকে প্রাণাপেক্ষা ভালবাসিয়া, তাঁহার সহিত সম্পূর্ণরূপে বৈষম্য-ভাব-বর্জ্জিত হইয়া কিরূপে সেই স্বর্গীয় যোগ দেওয়া যায়, গোষ্ঠ-