কৃষ্ণ ভ্রু-যুগল কৃঞ্চিত হইল। তাঁহার হস্তের আন্দোলন ও মুখ-ভঙ্গী ছায়ায় প্রতিবিম্বিত হইল। তখন শত্রুর উত্তেজনা ভ্রম করিয়া বলদেব সত্যই রাগিয়া গেলেন।
“আপন তনু ছায়া হেরি, রেষাবেশ হই,
হু হু পথ ছোড়াই বলি—অঙ্গুলি ঘন দেই।
কর পাঁচনি কক্ষে দাবি, রাঙ্গা ধুলি গায় মাখে,
কা-ক্কা কা-ক্কা কানাইয়া বলি ঘন ঘন ডাকে।”
এই মত্ততা, এই স্খলিত পদ, বিভ্রান্ত বাক্, নিজের ছায়ার সহিত লড়াই, সুদর্শন বলাই-এর গতিবিধি সমন্তই কৃষ্ণপ্রেমের ছাপ-মারা; এজন্য প্রস্ফুটিত শ্বেতপদ্ম যেরূপ জলের উপর ভাসে, সেইরূপ তাঁহার মূর্ত্তিতে আঁকা কৃষ্ণ-প্রেম সমস্ত উদ্ভ্রান্ত ব্যবহারের মধ্যে ফুটিয়া উঠিয়াছে। তোত্লার কানাই বলিতে কা-ক্কা কানাই ও ধবলী বলিতে ধব-ধব-ধব ধবলী বলিতে যাইয়া মুখে লালা পড়িতেছে, কবি তাহার মধ্যেও অপরূপ সৌন্দর্য্য আবিষ্কার করিয়াছেন।
“বলাই এর মুখ যেন বিধুরে, বুক বহি পড়ে মুখের নাল
যেন শ্বেত কমলের মধুরে।”
বলদেবকে দেখিয়া যশোদা ভীত হইলেন, এবার আর কৃষ্ণকে রাখা যাইবে না। তিনি মিনতি করিয়া বলিলেন, “গোপাল অতি শিশু, কোন বোধ-সোধ নাই—সে কাপড়খানি পর্য্যন্ত পরিতে শিখে নাই, নন্দালয়ে আসিবার পথে কাপড় খসিয়া পড়িলে সে থমকিয়া দাঁড়ায়, এদিকে কাপড় পড়িয়া গিয়া তাহার নুপূরসহ পা দু’খানি বেড়ীর মত জড়াইয়া ধরিয়াছে, হাঁটিতে পারে বা, তখন দু’হাতে চক্ষু ঢাকিয়া রাস্তায় দাঁড়াইয়া কাঁদিতে থাকে, এমন অসহায় অব্স্থায় আমি কত বার খুঁজিয়া পাইয়া তাহাকে বাড়ী লইয়া আসিয়াছি, তোরা এমন শিশুকে বিপৎ-সঙ্কুল গোষ্ঠে লইয়া যাইবি কোন প্রাণে?”