না, তথাপি তাহা বিশ্বাস করিলেন। রাধা সখীদেরে ডাকিয়া বলিলেন,
‘‘আজ কুদিন সুদিন ভেল,
আজ মাধব মন্দিরে আওব তুরিতে, কপাল কহিয়া গেল।’’
রাধার চিত্ত হর্ষে উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল—কৃষ্ণ আসিবেন, কে বলিল! রাধা বলিলেন “কপাল কহিয়া গেল”—আমার কপাল, আমার ভাগ্যলক্ষ্মী বলিয়া গেলেন। আমি অভ্রান্ত ভাবে আমার সে সৌভাগ্য বুঝিয়াছি। বহুদিন পরে
‘‘আমার চিকুর ফুরিছে, বসন খসিছে, পুলক যৌবন-ভার।
বাম অঙ্গ আঁখি, সঘনে নাচিছে, দুলিছে হিয়ার হার।’’
কোন দূত বা সংবাদবাহক বলিয়া যায় নাই; বাঁশী আমাকে ‘রাধা’ বলিয়া ডাকে নাই, এই কথা কোন বাহিরের সূত্র হইতে পাই নাই, আমি তাঁহার পদের নূপুর-সিঞ্জনের মধুর শব্দ শুনি নাই—কিন্তু তথাপি বুঝিয়াছি তিনি আসিতেছেন; নতুবা আমার বেণী-মুক্ত কুন্তল হঠাৎ মহাহ্লাদের সাড়া দিয়া উঠিবে কেন? আমার সুখ-রোমাঞ্চিত দেহ হইতে অঞ্চল বারংবার স্খলিত হইয়া পড়িতেছে কেন? আমার বিরহ-খিন্ন উপবাস ও জাগরণ-ক্লিষ্ট শরীর নব যৌবনের পুলকে অধীর হইয়া উঠিবে কেন? বাম অঙ্গ ও আঁখির নর্ত্তনেও সেই কথা বুঝাইতেছে। আজ সেই আনন্দের ঢেউ লাগিয়া হৃদয়ের স্পন্দনের সহিত বক্ষবিলম্বিত মুক্তাহার দুলিয়া উঠিতেছে।
নিত্যই তো প্রাতঃকালে গাছে গাছে কাকগণ কোলাহল করিয়া আহার বাঁটিয়া খায়; বিদ্যাপতি লিখিয়াছেন “কান্ত কাক-মুখে নাহি সংবাদই।” পুরাকালে দূরগত স্বামীর বিরহে কাতরা রমণীরা হাত জোড় করিয়া কাকের কাছে শত শত বার স্বামীর শুভাশুভ-বার্ত্তা জিজ্ঞাসা করিতেন। কাকের কি রবের কি অর্থ, তাহা কাক-চরিত্রে লিখিত আছে। রাধাও