পাতা:পদ্মানদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পদ্মানদীর মাঝি

থাকে এবং অবশেষে আষাঢ় ১৩৪৩-এ গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় পূর্বাশা-য় পদ্মানদীর মাঝির ধারাবাহিক প্রকাশ শুরু হওয়ার ছ-মাস পরেই ভারতবর্ষ পত্রিকায় পৌষ ১৩৪১ থেকে পুতুলনাচের ইতিকথা ধারাবাহিক প্রকাশিত হতে শুরু করে এবং বিরতিহীন ১২ কিস্তিতে অগ্রহায়ণ ১৩৪২ সালে উপন্যাসটির প্রকাশ সম্পূর্ণ হয়।

 পূর্বাশা এবং পদ্মানদীর মাঝি প্রসঙ্গে 'নব পর্যায়' পূর্বাশার প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যার (মাঘ ১৩৭০) সম্পাদকীয় 'পূর্বাশার কথা'য় পত্রিকার পূর্ব ইতিহাস বিবৃত করে সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য পদ্মানদীর মাঝি প্রসঙ্গে লেখেন

...তাছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'পদ্মানদীর মাঝি' ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে লাগল। তিনিও তখন প্রকাশক-মহলে অনাদৃত। রােদে পুড়ে খুবই উত্তেজিতভাবে তিনি আমাদের কোন ঠিকানায় যে এসেছিলেন মনে পড়ছে না। (কেন না, মাঝে একটা সর্প-অধ্যুষিত একতলায়, সদানন্দ রােডে এবং বুদ্ধদেব বসুর প্রতিবেশী হয়ে 'গােলাম মহম্মদ ম্যানসনে' থেকে এসেছি।) মানিকবাবুর হাতে ছিল 'পদ্মানদীর মাঝি'র পাণ্ডুলিপি। প্রকাশক-পাড়া ঘুরে এসেছেন, কেউ নিতে রাজি নন। কোন এক প্রকাশক নাকি বলেছেন 'সময় হলে আপনার বাড়ি গিয়েই বই নিয়ে আসব।' শুনে আমি বললাম: "তা-ই আসতে হবে ওঁদের। কিন্তু 'পূর্বাশা'কে কি আপনি দেবেন উপন্যাসটা? জানেন ত অবস্থা! বেশি টাকা দিতে পারব না। মাত্র একশাে দিতে পারি।" তিনি রাজি হয়ে দিলেন পাণ্ডুলিপি। আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল হয়ে বলে গেলেন "আমি লিখব—দেখবেন লিখব!" 'পদ্মানদীর মাঝি' এক সংখ্যায় বেরােতেই যাঁরা পূর্বাশার পাঠক তাঁরা মানিকবাবুর প্রশংসায় শতমুখ হয়ে উঠলেন।...

[পৃষ্ঠা ১০]

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমগ্র সাহিত্যকর্মে প্রথমাবধি অধিকাংশ রচনার ক্ষেত্রে উৎকর্ষসাধনের অভিপ্রায়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম পাঠ গ্রন্থরূপে প্রকাশকালে কোথাও সামান্য বা কোথাও ব্যাপক সংস্কারসাধন করেছেন। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে একই গ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণের ক্ষেত্রেও এই পরিমার্জনের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। পদ্মানদীর মাঝির পূর্বাশায় প্রকাশিত পত্রিকাপাঠ, গ্রন্থরূপের প্রথম সংস্করণ এবং পরবর্তী সংস্করণেও এ-জাতীয় পাঠান্তর লক্ষ করা যায়। অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র, দ্বিতীয় খণ্ডের (তৃতীয় সংশােধিত মুদ্রণ, জুন ২০০২) গ্রন্থ-পরিচয় অংশে প্রদত্ত এরূপ পাঠান্তরের কিছু তুলনামূলক নমুনা দ্রষ্টব্য।

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাধিক অনূদিত গ্রন্থ পদ্মানদীর মাঝি। বারাণসীর সরস্বতী প্রেস থেকে প্রবােধকুমার মজুমদার-কৃত একটি হিন্দি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। একই বছর ত্রিচুর, কেরালার কারেণ্ট বুক থেকে মালয়ালম ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থটির অনুবাদক শ্রীরবি বর্মা এবং ধারওয়ার থেকে প্রকাশিত কানাড়ি অনুবাদটির অনুবাদক শিবানন্দ যােশি। ১৯৬৫ সালে সম্মুখসুন্দরমের তামিল অনুবাদ প্রকাশিত হয় মাদ্রাজ থেকে। গােবিন্দচন্দ্র শাহু-কৃত ওড়িয়া ভাষার অনুবাদটির প্রকাশক সাহিত্য অকাদেমি, নিউ দিল্লি, প্রকাশকাল ১৯৯৭। এছাড়া হিন্দি এবং অন্য দু-একটি ভারতীয় ভাষায় কয়েকটি অননুমতিপ্রাপ্ত অনুবাদ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।