পাতা:পরশুরাম গ্রন্থাবলী ( তৃতীয় খণ্ড ) - রাজশেখর বসু.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

-সে কি ? ভাল ভাল জিনিসই তাে ওকে খেতে দেওয়া হচ্ছে, আমি যা। খাই বাঘও তাই খাচ্ছে। | কি জানেন, বাঘ হল কার্নিভােরস গােশতখাের জানোয়ার। কার্বোহাইড্রেট খাদ্য ওর সহ্য হচ্ছে না, গ্লুকোজ হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রােজ তিন বার ইনসুলিন দেওয়া দরকার, কিন্তু দেবে কে? —কি বলছ বুঝতে পারছি না। তুমি বাঘের ইলাজ করতে না পার তাে পাটনা থেকে বড় ডাক্তার আনাও। -আপনি ইচ্ছা করলে বড় ডাক্তার আনতে পারেন, কিন্তু কেউ কিছুই করতে পারবে না, ছাগল যেমন মাংস হজম করতে পারে না, বাঘ তেমনি পরি কচৌড়ি পারে না। ওকে যদি চাতে চান তবে মাংসের ব্যবস্থা করন। রঘুবীর সিং চিন্তিত হয়ে বললেন, বড় মুশকিল কি বাত। আচ্ছা, কাল আমার গরমহারাজ রামভরােসজী আসছেন, তিনি কি বলেন দেখা যাক। গরমহারাজ এলেন, রঘুবীর তাঁকে বাঘ দেখাতে নিয়ে গেলেন, ডাক্তার কালীবাবও সঙ্গে গেলেন। রামভরােসজী খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে বাঘকে প্রশ্ন করলেন, ক্যা বেটা রামখেলাওন, ক্যা হয়া তেরা ? বাঘ মদবেরে উত্তর দিলে, হলম। | রামভরেসি বললে, সমঝ লিয়া। আরে ই তাে বহত মামলী বীমারী। বিহা হয়। কালীবাবু বললেন, বিহা কি রকম বেয়ারাম ? —নহি সমঝা? বাঘ বাঘিনী মাংতা। কালীবাব, বললেন, ও, বাঘের বিরহ হয়েছে, তাই ঝিমিয়ে আছে। তবে চটপট বাঘিনী যােগাড় করন। | চৌধুরী রঘুবীর সিংএর লােকবল অথবল প্রচুর। তিন দিনের মধ্যে একটা তরণী বাঘিনী ধরা পড়ল। রামভরােসজী তার নাম রাখলেন রামপিয়ারী। বিধান দিলেন, আলাদা পিজরায় রেখে বাঘিনীকেও পরি কচৌরি ওগয়রহ খেতে দেওয়া হক। যখন নিরামিষ ভােজনে অভ্যস্ত হবে, বাঘ বাঘিনী দুজনেই সাত্তিক স্বভাব পাবে, তখন পরত ডাকিয়ে বিয়ে দিয়ে এক খাঁচায় রাখবে। খিদের জালায় বাঘিনীও ক্রমশঃ পরি কচৌড়ি পেড়া ইত্যাদি খেতে আরম্ভ করলে। সাত্ত্বিক আহারের ফলে বাঘের যেসব উপসর্গ দেখা দিয়েছিল বাঘিনীরও তাই দেখা গেল। তখন রামভরােস স্বামীর উপদেশে ঘটা করে বিয়ে দেবার আয়ােজন হল, ঢোল বাজল, পুরােহিত মিসিরজী মন্ত্রপাঠ করলেন, তবে দুই থাবা এক করে দেবার সাহস তাঁর হল না। বাঘ-বাঘিনীর বাসের জন্য একটা খাঁচা ফল দিয়ে সাজিয়ে তার মধ্যে বড় বড় বারকোশে নানাপ্রকার খাদ্যসামগ্রী এবং পান সুপারী কপর ছােয়ারা নারকেল-কুচি প্রভৃতি মাঙ্গল্য দ্রব্য রাখা হল। বিবাহসভায় রঘুবীর সিং, তাঁর আত্মীয়-স্বজন, রামভরােসজী, কালীবাব, অকল খাঁ এবং আরও বিস্তার লােক উপস্থিত ছিলেন। সকলেই আশা করলেন যে এইবারে এদের মেজাজ ভাল থাকবে, খাদ্য হজম হবে, দুটিতে মিলে মিশে সুখে ঘরকন্না করবে। | বর-কনের শুভদষ্টি-বিনিময় কেমন হয় দেখবার জন্যে সকলেই উদগ্রীব হয়ে আছেন। শুভ মুহর্তে, শখি বেজে উঠল, বিহারের প্রথা অনুসারে পরনারীরা ১৪