পাতা:পরশুরাম গ্রন্থাবলী ( তৃতীয় খণ্ড ) - রাজশেখর বসু.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

চিৎকার করে গাইতে লাগল-পরদেশীয়া আওল আগানা। অকল খাঁ কপাট টেনে নিয়ে নবদম্পতিকে এক খাঁচায় পুরে দিলে। ফয়েডের শিষ্যরা যাই বলন, প্রাণীর আদিম প্রেরণা ক্ষৎপিপাসা। রামখেলাওন আর রামপিয়ারী হিংস্র বাপদ, নামের আগে রাম যােগ করে এবং অনেক দিন নিরামিষ খাইয়েও তাদের স্বভাব বদলানাে যায় নি। চার চক্ষর মিলন হবা মাত্র আমিষবভুক্ষ, দুই প্রাণীর ক্যানিবল প্রবত্তি চাগিয়ে উঠল, প্রচণ্ড গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা পরস্পরের সামনের বাঁ পায়ে কামড় দিয়ে এক এক গ্রাস মাংস তুলে নিলে। | বাঘের গর্জন, রক্তের স্রোত, মানুষের চিৎকার, লল্লল লের কান্না সমস্ত মিলে সেই বিবাহসভায় হলথুল পড়ে গেল। রঘুবীরের আদেশে অকল খাঁ একটা জলন্ত মশালের খোঁচা দিয়ে কোনও রকমে বাঘ দুটোকে তফতি করে তাদের নিজের নিজের খাঁচায় পুরে দিলে। রামভরােস মহারাজ বললেন, এই দুই জীব পূর্বজন্মে পাপ করেছিল তাই এই দশা হয়েছে, এদের চরিত্র দুরস্ত হতে আরও চরাশি জন্ম লাগবে। রঘুবীর সিং জিজ্ঞাসা করলেন, ডাক্তারবাবু, এখন কি করা উচিত? কালীবাব, বললেন, চৌধুরীজী, আপনি চেষ্টার এটি করেন নি, এরা যখন কিছুতেই সাত্ত্বিক হল না তখন আর দেরি না করে এদের আলীপুরে পাঠিয়ে দিন। তারপর যােগীন আমাকে বললে, রঘুবীর সিং বাঘ দুটোকে বিদেয় করতে রাজী হলেন। কালীবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, তিনি সমস্ত ঘটনা জানিয়ে আমাকে একটি চিঠি লিখলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, আলীপুর জ, এই দুটো বাঘকে রাখবে কিনা। খোঁড়া বাঘ শুনে ট্রাস্টীরা প্রথমে একট, খুতখত করেছিলেন। কিন্তু চৗধরী রঘুবীর সিং দিলদরিয়া লােক, ব্যাঘদম্পতির যৌতুক স্বরপ হ টাকার একটি চেক আগাম পাঠিয়ে দিলেন। আর কোনও আপত্তি হল না, রামখেলাওন আর রামপিয়ারী কালীবাবুর সঙ্গে এসে আমাদের এখানে ভরতি হল। এখন মোটের ওপর ভালই আছে, তবে অনেক দিন সাত্ত্বিক আহারের ফলে ওদের প্যাংক্ৰিয়াস ড্যামেজ হয়েছে, হজমশক্তি কমে গেছে, মেজাজ খিটখিটে হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মােটেই বনে না।