খেতে আমি বড্ড ভালোবাসি।” রমেশ হাসিয়া একটুখানি ঘাড় নাড়িল। কথাটা বিশ্বাস করা তাহার কাছে অত্যন্ত কঠিন বলিয়া মনে হইল না। রাখাল কি কাজে বাহিরে যাইতেছিল। রমেশ তাহাকে ডাকিয়া কহিল, “ভেতরে বোধ করি আচায্যিমশাই আছেন; যা ত রাখাল, কিছু ক্ষীরমোহন তাঁকে আন্তে ব’লে আয় দেখি।” সন্ধ্যা বোধ করি উত্তীর্ণ হইয়াছে। তথাপি ব্রাহ্মণেরা ক্ষীরমোহনের আশায় উৎসুক হইয়া বসিয়া আছেন। রাখাল ফিরিয়া আসিয়া বলিল, “আজ আর ভাঁড়ারের চাবি খোলা হবে না বাবু।” রমেশ মনে মনে বিরক্ত হইল। কহিল, “বল্ গে, আমি আন্তে বল্ছি।”
গোবিন্দ গাঙ্গুলী রমেশের অসন্তোষ লক্ষ্য করিয়া চোক ঘুরাইয়া কহিল, “দখ্লে দীনু দা ভৈরবের আক্কেল? এ যে দেখি মায়ের চেয়ে মাসীর বেশী দরদ। সেইজন্যই, আমি বলি—” তিনি কি বলেন, তাহা না শুনিয়াই রাখাল বলিয়া উঠিল—“আচায্যিমশাই কি কর্বেন? ও-বাড়ী থেকে গিন্নীমা এসে ভাঁড়ার বন্ধ করেছেন যে!” ধর্ম্মদাস এবং গোবিন্দ উভয়ে চমকিয়া উঠিল—“কে, বড়-গিন্নী?” রমেশ সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করিল, “জ্যাঠাইমা এসেছেন?” “আজ্ঞে হাঁ, তিনি এসেই ছোট বড় দুই ভাঁড়ারই তালাবন্ধ ক’রে ফেলেচেন।” বিস্ময়ে, আনন্দে, রমেশ দ্বিতীয় কথাটি না বলিয়া দ্রুতপদে ভিতরে চলিয়া গেল।