পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
পাখীর কথা

না; সম্রাটের নিকটে এই যাযাবর খেচরের দৌত্য ব্যর্থ হইয়া গেল। তাহারা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ দক্ষিণে আশ্রয়লাভ করিয়া বাঁচিল;—আর নেপোলিয়ন রহিলেন—মস্কো নগরীতে! * * * নেপোলিয়নের জীবনের করুণতম tragedy সম্ভাবিত হইত না, যদি তিনি একবার চোখ মেলিয়া পাখীর গতিবিধি পর্য্যবেক্ষণ করিতেন।

 নেপোলিয়নকে দোষ দিলে চলিবে না। পাখীর গতিবিধি ভাল কবিয়া পর্য্যবেক্ষণ করা আবশ্যক এ কথা মানব-সমাজে কয়জন স্বীকার করিয়া থাকেন? এই বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানগৌরবের দিনে যাঁহারা এ কথা স্বীকার কবেন, তাঁহাদের মধ্যে কয়জন পর্য্যবেক্ষণের উৎকৃষ্ট রীতি অবগত আছেন? তবে একটু সুলক্ষণ এই যে, নানা কারণে স্বার্থপর মানবসমাজের মধ্যে অনেকে অনেক প্রকারে পাখীর জীবন-লীলা যথাসম্ভব আগাগোড়া দেখিবার চেষ্টা করিতেছেন। প্রধানতঃ আমরা এ স্থলে দুই শ্রেণীর পর্য্যবেক্ষক দেখিতে পাই;—একদল লোক আছেন যাঁহারা বাড়ীতে পাখী পুষিয়া পিঞ্জরমধ্যে অথবা কৃত্রিম পক্ষিভবনে পক্ষিজীবনের ইতিহাস আলোচনা করিবার সুযোগ পাইতে চেষ্টা করেন। আর এক শ্রেণীর তত্ত্বজিজ্ঞাসু নিজের গৃহে বনবিহঙ্গকে না আনিয়া নিজ গৃহ ছাড়িয়া বনে জঙ্গলে মুক্ত আকাশতলে স্বাধীন বিহঙ্গজীবন নিরীক্ষণ করিবার উপায় উদ্ভাবন করিতেছেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই গোড়া হইতে প্রথম শ্রেণীভুক্ত হইয়া পড়ি। অনেকের মধ্যে এইরূপ ধারণা দাঁড়াইয়া গিয়াছে যে, এই প্রকারে পাখীকে আমাদের অত্যন্ত নিকটে টানিয়া আনিতে পারিলে এবং যথারীতি পরিচর্য্যা করিয়া তাহাকে কিছুদিন বাঁচাইয়া রাখিতে পারিলে তাহার সম্বন্ধে সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় সম্যক্‌রূপে জানিবার যত সুবিধা হয়, তত আর কিছুতেই হয় না। এই শ্রেণীর পণ্ডিতগণের মধ্যে যাঁহারা অগ্রণী তাঁহাদের এ ধারণা এখনও অনেকটা অটল রহিয়াছে।