পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় ভাগ
১০৫

এই সমস্ত পৌরাণিক তথ্য আমাদের বৈজ্ঞানিক আলোচনার বিষয়ীভূত নহে; অথচ এই সমস্ত পৌরাণিক কাহিনী হইতে ইহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, অতি প্রাচীন কালে রোমক সভ্যতার অভ্যুদয়ের পূর্ব্বে পাশ্চাত্য ভূখণ্ডে মানুষের সঙ্গে পাখীর নিবিড় সম্পর্ক দাঁড়াইয়া গিয়াছিল। পাখী যে মানবের সখা হইতে পারে তাহা ধরিয়া লওয়া হইয়াছিল। যে পাখীকে বলি দেওয়া হইত, তাহার অন্ত্র পরীক্ষা করিয়া পুরোহিত stateকে কোনও কার্য্যে ব্রতী হওয়া উচিত কি না—বলিয়া দিতে পারিতেন; অথবা আকাশমার্গে স্বাধীন পাখীর বিচরণ ও গতিভঙ্গি লক্ষ্য করিয়া মানুষের ভবিষ্যৎ ভালমন্দ বিচার করিতে বসিতেন। সমগ্র রোমক সমাজ বহু দিন ইহা মানিয়া চলিয়াছিল; কিন্তু ইহার পশ্চাতে কোনও নিগূঢ় রহস্য আছে কি না—বিহঙ্গতত্ত্বের দিক্ হইতে তাহার আলোচনা আপাততঃ নিষ্প্রয়োজন।

 সে কথা যা’ক্। য়ুরোপে মধ্যযুগে অভিজাত-সমাজের যুবকগণ অশ্বপৃষ্ঠে শিকার করিবার জন্য বাম বাহু-প্রকোষ্ঠের উপরে যে শ্যেন পক্ষী লইয়া বাহির হইত, তাহা তৎকালীন পাশ্চাত্য অভিজাত-সমাজের ইতিহাসের সামগ্রী হইয়া গিয়াছে; সে প্রসঙ্গেরও উত্থাপন করিতে চাহি না।

 কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে যাঁহার প্রতিভায় ও সমরনৈপুণ্যে জগৎ চমকিত হইয়া গিয়াছিল, সেই বীরশ্রেষ্ঠ নেপোলিয়ানের জীবনের ইতিহাস বিবৃত করিতে বসিয়া ফরাসী ইতিহাস-রচয়িতা আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছেন,—হায়! যদি ১৮১১ খৃঃ অব্দের সেপ্টেম্বর মাসে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট পাখীর গতিবিধি লক্ষ্য করিতেন! সারস জাতীয় পাখীগুলি দলে দলে য়ুরোপ-ভূখণ্ডে উত্তর হইতে দক্ষিণ দিকে প্রয়াণ করিতেছিল; তবুও তাঁহার চোখ ফুটিল না; তারা যে দারুণ শীতের আগমন বার্ত্তা ঘোষণা করিল—তাহা তিনি বুঝিতে পারিলেন