পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৬৯

সৌন্দর্য্যবর্দ্ধন করিয়া থাকে। হেমন্ত ঋতুতে প্রফুল্লনীলোৎপলশোভিত প্রসন্নতোয় সুশীতল সরোবরে কাদম্বজাতীয় হংসের কলোচ্ছ্বাস আমাদের হৃদয়ের তটমূলে আসিয়া আঘাত করিতে থাকে। পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, শিশিরবর্ণনায় আর আমরা আমাদের পরিচিত হংসজাতীয় বিহঙ্গগুলিকে দেখিতে পাই না। কেন কবির শিশিরবর্ণনার মধ্যে হংসের স্থান রহিল না, ইহার উত্তর কবিবর নিজেই যেন কতকটা দিয়াছেন বলিয়া মনে হয়;—

নিরুদ্ধবাতায়নমন্দিরোদরং

হুতাশনো ভানুমতো গভস্তয়ঃ। ইত্যাদি

 দারুণ শীতে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া তন্মধ্যে অবরুদ্ধ হইয়া বসিয়া থাকিতে ভাল লাগে; হুতাশন এবং সূর্য্যরশ্মি অত্যন্ত প্রীতিপ্রদ। চন্দন ভাল লাগে না; চন্দ্রকিরণ ভাল লাভে না; হর্ম্ম্যতল সুখকর নয়; সান্দ্রতুষার-শীতল বায়ুও সহ্য হয় না। সেই নিরুদ্ধবাতায়ন মন্দিরমধ্যে থাকিয়া পূর্ব্বের মত বহিঃপ্রকৃতির সহিত সম্বন্ধ রক্ষা করা অত্যন্ত সুকঠিন। প্রকৃতিবর্ণনায় এখন কেবলমাত্র তুষারসংঘাতনিপাত-শীতলা রাত্রিকে কবিবর তাঁহার নায়কনায়িকার backgroundরূপে বড় করিয়া দেখিতেছেন; আর পশুপক্ষী নদী-হ্রদ-তড়াগ প্রভৃতি অন্য সমস্তই যেন তাঁহার উপেক্ষণীয়। এ অবস্থায় কবিবরের তুলিকায় শিশিরচিত্রে হাঁসের চেহারার রেখাটি পর্য্যন্ত যে কোথাও ফুটিয়া উঠিল না, ইহা আর বিচিত্র কি? বাস্তবিক কিন্তু শীতকালে হংসজাতীয় অনেক পাখী এদেশে থাকে, এ কথার উল্লেখ পূর্ব্বে করিয়াছি। হয়ত’ শীতের পাণ্ডুরতার মধ্যে আমাদের Grey Gooseএর পাণ্ডুরতা কোনও বিশিষ্ট সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করে না বলিয়া সৌন্দর্য্যের কবি তাহাকে আমলে আনেন নাই। এস্থলে আমি শুধু নিছক সৌন্দর্য্য তত্ত্বের দিক্ হইতে এইটুকু ইঙ্গিত করিলাম মাত্র। কিন্তু যাঁহারা