পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
পাখীর কথা

পক্ষী শিকার করিয়া আনন্দ পান, তাঁহারা গভীর শীতের মধ্যে হাঁসের রূপবর্ণনা শতমুখে করিয়া থাকেন। বৎসরের মধ্যে যে কয় মাস হাঁসেরা নদী-হ্রদ-সরোবর-সীমান্তে বিচরণ করে, তাহার অধিকাংশই শিশিরের প্রাক্কাল হইতে অবসান পর্য্যন্ত, একথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। আশ্বিন কার্ত্তিক মাসে দূর দেশান্তর হইতে আর্য্যাবর্ত্তে উড়িয়া আসিয়া মাঘ ফাল্গুনে তাহারা চলিয়া যায়।

 এখন বোধ হয় সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাকে বুঝাইতে হইবে না যে, যখন পিকসহচর বসন্ত আসিয়া উপস্থিত হইল, হংসজাতীয় পাখীগুলির দেখা পাই না কেন। পূর্ব্ব হইতেই প্রব্রজনশীল কতিপয়দিনস্থায়ী হংস আর্য্যাবর্ত্তের বাহিরে, হিমালয়ের পরপারে, তিব্বতীয় হ্রদসান্নিধ্যে, উত্তর-মেরু প্রদেশস্থ জলাশয়-তটদেশে তাহার গার্হস্থ্যলীলার অভিনয় করিবার জন্য ক্রৌঞ্চরন্ধ্রের ভিতর দিয়া উড়িয়া যাইতে আরম্ভ করিয়াছে। তাই যখন নবীন বসন্তে কুঞ্জে কুঞ্জে কোকিলের কুহুধ্বনি বসন্ত ঋতুর আগমনবার্ত্তা ঘোষণা করিল, তখন আর কাদম্ব, কারণ্ডব রাজহংসের কলধ্বনি শ্রুত হয় না।

 এখন এই ঋতুসংহারের হংসজাতীয় পাখীগুলির কিঞ্চিৎ বৈজ্ঞানিক পরিচয় আবশ্যক। ইহাদিগের মধ্যে একটির সহিত আমাদের পূর্ব্বেই পরিচয় হইয়া গিয়াছে—সেটি রাজহংস।রাজহংস পক্ষিতত্ত্বজ্ঞের-নিকটে ইহা Phoenicopterus বা Flamingo নামে পরিচিত। এই পক্ষীটি যাযাবর; ইহার চঞ্চু ও চরণ লোহিত। শরতের সুনীল আকাশতলে কুমুদশোভিত সরোবরমধ্যে বিরাজমান Flamingoকে ঋতুসংহারের কবি উজ্জ্বল রেখায় অঙ্কিত করিয়াছেন। আমরা অন্যত্র দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি যে, উদ্ভিজ্জ পদার্থ ইহার প্রিয় খাদ্য;—সেই খাদ্য সরোবর-মধ্যে অথবা সরোবর-সান্নিধ্যে সে প্রচুর পরিমাণে পাইয়া থাকে; তাই আমরা তাহাকে মহাকবির শরদ্‌বর্ণনায়