পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
১১

 মানবজাতির এই পক্ষিপালনের মূলে যে কেবল হিংসালেশবিহীন স্নেহ-মমতা বিদ্যমান আছে, তাহা নহে; পুরাকাল হইতে দেখা যায় যে, দেশ, কাল এবং পাত্র ভেদে পক্ষিজাতিপক্ষিপালনপ্রথার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ মানুষের খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। এই খাদ্য অন্বেষণ ও আহরণ করা বহু ক্লেশ-ও পরিশ্রম-সাপেক্ষ। এই পরিশ্রমের লাঘব করিবার নিমিত্ত উপায়কুশল মানবজাতি কুক্কুট, পারাবত প্রভৃতি কতিপয় জাতীয় বিহঙ্গ গৃহে পালন করিতে আরম্ভ করে; এবং উহাদের অণ্ড ও শাবক খাদ্যরূপে গ্রহণ করে। পক্ষী আহরণ ও শিকার কতিপয় মানবজাতির উপজীবিকা হইয়াছে; এবং কোন কোন জাতি বা সম্প্রদায় পালিত পক্ষীদিগকে কৌতুক প্রদর্শন[১] করিতে শিখাইয়া আপনাদিগের উপার্জ্জনের সংস্থান করিয়া লয়। বুলবুল, তিতির এবং কুক্কুটের[২] লড়াই ভারতবর্ষে বহুকাল হইতে প্রসিদ্ধ। লড়াইয়ে জয় হইলে পালকের যে কেবল অর্থোপার্জ্জন হয় তাহা নহে, সঙ্গে-সঙ্গে তাঁহার সম্ভ্রমও[৩]

  1. শিক্ষিত পাখী লইয়া এরূপ কৌতুক-ক্রীড়ার প্রচলন ভারতবর্ষেও দেখা যায়; কারণ তথায় স্থানবিশেষে কৌতুকপ্রিয় যুবকগণ আপনাদের কৌতূহলবৃত্তি চরিতার্থ করিবার জন্য বুলবুলপক্ষীকে এরূপ শিক্ষা দেয় যে, উহাকে আপনাদের প্রণয়-ভাজন রমণীর নিকট সঙ্কেতপূর্ব্বক ছাড়িয়া দিলেই পক্ষীটি রমণীর ললাটমধ্যস্থ টিপ চঞ্চুপুটের দ্বারা নিপুণভাবে আকর্ষণ করিয়া তাহার প্রভুকে অর্পণ করে। ডাক্তার ব্যট্‌লার সাহেব তাঁহার “Foreign Birds” নামক গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ করিয়াছেন।
  2. দণ্ড্যাচার্য্য-প্রণীত ‘দশকুমারচরিত’ গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায় যে, গ্রন্থকার প্রাচ্য দেশীয় নারিকেলজাতীয় কুক্কুটের সহিত পশ্চিমদেশবাসী বলাকজাতীয় কুক্কুটের একটী তুমুল যুদ্ধপ্রসঙ্গ বর্ণনায় ক্ষুদ্রকায় বলাক-জাতীয় কুক্কুটের বিজয়ঘোষণা করিয়াছেন (পঞ্চমোচ্ছ্বাস, প্রমতি-চরিত, পৃঃ ২৪৮-৪৯, জীবানন্দ বিদ্যাসাগর সংস্করণ)।
  3. প্রাচীন রোম প্রদেশে দেখা যায় যে, যে ব্যক্তি যুদ্ধকুশল পক্ষীর প্রতি যথোপযুক্ত গৌরব প্রদর্শন না করিতেন, তিনি সাধারণের চক্ষে নিকৃষ্টরূপে পরিগণিত হইয়া এমন কি সময়ে-সময়ে দণ্ডার্হ হইতেন। যুদ্ধে লব্ধপ্রতিষ্ঠ একটি তিতির পক্ষী মিশরের কোন এক নগরপাল কর্ত্তৃক খাদ্যরূপে ক্রীত হওয়ায় সম্রাট্ অগষ্টস্ তাঁহার প্রাণদণ্ডের আজ্ঞা দেন।