পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
পাখীর কথা

বাড়িয়া যায়। কোন কোন লড়াইয়ে পক্ষীদিগের দৈহিক বলের পরীক্ষা না হইয়া উহাদের স্বরের উচ্চতা এবং মাধুর্য্য পরীক্ষিত হইয়া থাকে। পরীক্ষায় জয়লাভ হইলে পালক যথেষ্ট পুরস্কৃত হয় এবং তাহার পক্ষীর দরও দ্বিগুণ বাড়িয়া যায়। স্বীয় পাখীগুলিকে যুদ্ধোপযোগী করিবার নিমিত্ত পালকদিগকে যে বহু যত্ন ও পরিশ্রম স্বীকার করিতে হয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। কোন কোন পক্ষী পালকদিগের নির্দ্দিষ্ট কোন নৈমিত্তিক কার্য্যের সাহায্যার্থ পালিত ও শিক্ষিত হয়। চীনপ্রদেশে আমরা দেখিতে পাই যে, অতি প্রাচীনকাল হইতে তদ্দেশীয় ধীবর-সম্প্রদায় পালিত সমুদ্রকাক বা Cormorant পাখীকে[১] মৎস্য ধরিতে সহায়তা করিবার নিমিত্ত শিক্ষা প্রদান করিত। পেচকের সাহায্যে পক্ষিশিকারের সুবিধা বোধে ইতালীদেশবাসী ব্যাধ উহাকে পালন করিয়া থাকে[২]। বাজ বা শিক্‌রা পাখীকে পোষ মানাইয়া উহার দ্বারা অপর পক্ষী শিকার করা ভারতবর্ষের ন্যায় য়ুরোপেও প্রচলিত দেখা যায়; এমন কি তথায় ইহা মধ্যযুগের রাজণ্যবৃন্দের মধ্যে একটী ফ্যাশন-এ পরিণত হইয়াছিল। সম্ভবতঃ মানুষের এইরূপ নানা স্বার্থ-সিদ্ধির উপায়স্বরূপ গৃহপালিত পারাবতের অভ্যুত্থান হইয়াছে; সে যেমন আহারসামগ্রীর মধ্যে গণ্য, তেমনই পত্রবাহকরূপে সে মানুষের দৌত্যকর্মে নিয়োজিত হয়[৩]

    Vide ‘Birds of Shakespeare’ by E. J. Harting, p. 218. যুদ্ধনিপুণ পক্ষী যখন এরূপ সমাদৃত হয়, তখন তাহার পালক যে অধিকতর সম্মানার্হ হইবেন, তাহা আর বিচিত্র কি?

  1. E. Stanley’s ‘A Familiar History of Birds,’ p. 370.
  2. Ibid, p. 154.
  3. ইতিহাসে পারাবতের পত্রবাহকরূপে নিয়োগের প্রথম উল্লেখ সলোমনের রাজত্বকাল হইতে দেখা যায় (Encyclopædia Britannica, Tenth Ed. Vol, XXXI. p. 770.)

    ভারতবর্ষে মৌর্যরাজের শিকারিগণ কর্ত্তৃক পারাবতের এরূপ ব্যবহার কৌটিল্য-প্রণীত ‘অর্থ-শাস্ত্র’ গ্রন্থে উল্লিখিত আছে। Vide ‘Studies in Ancient Hindu Polity’ Vol. I by Narendra Nath Law, page 30.