পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২৪১

খাদ্যাহরণকালে গৃধ্রেরা আকাশে মণ্ডলাকারে ঘুরিয়া ঘুরিয়া উড়িয়া বেড়ায়। মহাকবিও এই উৎপতনভঙ্গীর এইরূপ আভাস দিয়াছেন,

    যে শকুনির বাসা হয় না এমন নহে। মহাকবির নাটকের মধ্যে যখন সহসা গৃধ্রের নিবাসবৃক্ষের কথা আসিয়া পড়িল, তখন উক্ত বৃক্ষকে গৃধ্রের নীড়াধার সিদ্ধান্ত করিবার পূর্ব্বে বৈজ্ঞানিক পক্ষিতত্ত্ব-জিজ্ঞাসার দিক হইতে এই প্রশ্ন প্রথমেই আসিয়া পড়ে যে, যে ঋতুকে background করিয়া নাটকবর্ণিত কোনও বিশিষ্ট ব্যাপার সঙ্ঘটিত হইতেছে সে ঋতুতে Vulturidæ শ্রেণীর কোনও পাখীর বৃক্ষাগ্রে nidification বা নীড়রচনা সম্ভষপর কি না? দেখা যাইতেছে যে গৃধ্রনিবাসবৃক্ষপ্রসঙ্গের অব্যবহিত পূর্ব্বেই বর্ষা ঋতুর প্রাদুর্ভাব,—বিকৃতমস্তিষ্ক রাজা পুরুরবা মাথার উপরে ঘনঘটা দেখিয়া মনে করিতেছেন যে বিশ্বপ্রকৃতি তাঁহার মাথার উপরে রাজছত্র ধরিয়াছেন,—

    বিদ্যুল্লেখা কনকরুচিরং শ্রীবিতানং মমাভ্রং
    ব্যাধূয়ন্তে নিচুলতরুভির্মঞ্জরীচামরাণি।
    ঘর্ম্মচ্ছেদাৎ পটুতরগিরো বন্দিনো নীলকণ্ঠা
    ধারাসারোপনয়নপরা নৈগমাশ্চাম্বুবাহাঃ॥

    আকাশের বিদ্যুল্লেখাসমন্বিত কনকরুচির মেঘ আমার মাথার উপরে রাজছত্রের মত প্রসারিত হইয়া রহিয়াছে, কম্পমান নিচুলতরুর মঞ্জরী চামর ব্যজন করিতেছে, নীলকণ্ঠ ময়ূর সুস্বরে আমার বন্দনা গান করিতেছে।

     এখন ইহারই কিছু পরে যদি গৃধ্রের নিবাসবৃক্ষের অন্বেষণে বাহির হইতে হয়, তাহা হইলে গৃধ্রের roosting place ব্যতীত আমরা আর কিছু দেখিতে পাইব কি? Vulturidæ শ্রেণীর প্রায় সকল পাখী শীতকালে অর্থাৎ পৌষ মাসের মধ্যে আরম্ভ করিয়া, লাগাইৎ চৈত্রের শেষ অথবা কোন কোন স্থলে বৈশাখের প্রারম্ভের মধ্যে স্বরচিত নীড়ে ডিম্বপ্রসব, শাবকোৎপাদন ইত্যাদি গৃহস্থলীর যাবতীয় কর্ম্ম শেষ করিয়া থাকে। তাহার পর বর্ষাকালে কোনও বৃক্ষ শকুনির nesting place হইতে পারে না, কিন্তু roosting place হইতে পারে। এই সমস্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থা হিসাব করিয়া আমি নিবাসবৃক্ষ অর্থে roosting place সমীচীন বিবেচনা করি। কেহ যেন মনে না করেন যে কাউয়েল (E. B. Cowell) সাহেবের অনুবাদে roosting place আছে বলিয়া আমি তাহা নির্ব্বিচারে গ্রহণ করিয়াছি।

     অতএব দেখা যাইতেছে যে ঋতুবিশেষে গৃধ্রের নিবাসবৃক্ষ বা nesting place থাকিলেও, কবিবর্ণিত ব্যাপারের সময় নিশ্চয়ই গ্রামপ্রান্তে কোনও বৃক্ষ হয়’ত দলবদ্ধ শকুনির roosting place ছিল। তাহাই কবিবর্ণিত নিবাসবৃক্ষ। এই নিবাসবৃক্ষের নিকটে যে ভাগাড় থাকা চাই, নহিলে ইহার উপর শকুনির নিত্য আসিয়া বসা সম্ভবপর নয়, এরূপ অনুমান করা নিষ্প্রয়োজন। এই যোজনদৃষ্টি বিহঙ্গ যেখানেই মৃত পশু দেখিতে পায়, প্রান্তরেই হউক, অথবা