পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫০
পাখীর কথা

 এখন দেখিতে হইবে যে ইহাকে “পরভৃত”, “পরপুষ্ট” আখ্যা দেওয়া হয় কেন? ইহার আলোচনায় এই বিহঙ্গের জন্ম-কাহিনী বিবৃত করিতে হইবে। তবেই বুঝিতে পারা যাইবে যে, উপর্য্যুক্ত আখ্যাগুলি বিশেষভাবে এই জাতীয় পাখীর প্রতি প্রযোজ্য কি না, অথবা ইহা অলীক অপবাদমাত্র। কাহার নীড়ে ইহার প্রথম আবির্ভাব, পিতৃ-মাতৃপরিত্যক্ত ডিম্বটিকে আর কেহ ফুটাইয়া তোলে কি না, জীবনারম্ভে কে ইহাকে পোষণ করে এবং কেমন করিয়াই বা করে, এই সমস্ত ব্যাপার কম রহস্যময় নহে। কেন ইহাকে বলা হইল—“বিহগেষু পণ্ডিতৈষা জাতিঃ?” রাজা তাহাকে ‘মদনদূতী’ সম্বোধনে অভিহিত করিলেন কেন?

 আমরা শেষের প্রশ্নটা লইয়া এই আলোচনার সূত্রপাত করিব। বসন্ত সখা মদনের দূতী বলিয়া কোকিলাকে পরিচিত করিবার কারণ অন্বেষণ করিতে আমাদিগকে বাঙ্গালা ছাড়িয়া বেশী দূরে যাইতে হইবে না। শিশিরাপগমে বসন্ত ঋতুর আগমন-বার্ত্তা নবপুষ্পকিসলয়শোভিত ভারতের কুঞ্জে কুঞ্জে এই পরভৃত পরপুষ্ট পাখীটি যেমন করিয়া ঘোষণা করে, তেমন আর কেহ করে না। মালবিকাগ্নিমিত্রে “আমত্তানাং শ্রবণসুভগৈঃ কূজিতৈঃ কোকিলানাম্” বসন্তের আগমন সূচিত করিতেছে। আবার নাটকের পঞ্চম অঙ্কে দেখা যাইতেছে যে “রতি-সহচর মন্মথ পরভৃত-কল-কূজনে বসন্তের আবির্ভাব প্রকাশ করিয়া থাকেন।” এই সকল বর্ণনা কিছুমাত্র অপ্রাকৃত বা অতিরঞ্জিত নহে। ইংরাজ লেখক বলিতেছেন—“In the breeding season, from March or April till July, its cry of ku-il, ku-il, repeated several times, increasing in intensity and ascending in the scale, is to be heard in almost every grove”[১]। মিথুনাবস্থায় বিহঙ্গদম্পতির এই যে আনন্দো-

  1. ব্লানফোর্ড (Fauna of Br. India, Birds, Vol. III.)