পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৩১

কূটবুদ্ধিপ্রভাবে খাঁচার বিচিত্র নির্ম্মাণ-কৌশল প্রদর্শন করিয়া সাধারণের নিকট বাহবা পাইবার প্রয়াস পাইয়া থাকেন। প্রদর্শনীকালে তাঁহদিগের উদ্ভট ক্রিয়াকলাপের প্রতি সহজেই দর্শকবৃন্দের চিত্ত আকৃষ্ট হওয়ায় যশোলাভের পন্থা সুগম হইয়া উঠে; সঙ্গে সঙ্গে বর্ণ-বৈচিত্র্যপ্রাপ্ত পক্ষীদিগকে ইঁহারা অসম্ভব দরে বিক্রয় করিবার সুযোগ পান। তৃতীয়;—এই শ্রেণীর পক্ষিপালকগণ ধন, মান বা স্বার্থের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করিয়া একাগ্রমনে বিজ্ঞানচর্চ্চায় ব্যাপৃত থাকেন। বিহঙ্গজাতির জীবন-বৈচিত্র্যের ধারা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে লক্ষ্য করিয়া ইঁহারা যে সকল তথ্যে উপনীত হইতেছেন, ঐ তথ্য বা সিদ্ধান্তসমূহ তাঁহদিগের চিত্ত উদ্ভাসিত করিয়া জ্ঞানপিপাসা মুহুর্মুহুঃ জাগাইয়া তুলিতেছে। যিনি পক্ষিপালনের উদ্দেশ্য যথাযথরূপে উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন, তিনি যে দ্বিতীয় শ্রেণীর পক্ষিপালকগণকে নিকৃষ্ট বলিয়া গণ্য করিবেন, সে বিষয়ে আদৌ সন্দেহ নাই। এই শ্রেণীর পক্ষিপালকগণের প্রত্যেক ক্রিয়াকলাপ এত স্বার্থ-বিজড়িত যে, সেগুলি প্রদর্শনীর দর্শকবৃন্দের নিকট অত্যাশ্চর্য্য বলিয়া পরিগণিত হইলেও অনেক সময়ে তত্ত্বানুসন্ধিৎসু বৈজ্ঞানিকের তত্ত্বমীমাংসার বিঘ্ন ঘটাইবার উপক্রম করে। পরন্তু অনেক সময়ে তাহাদিগের চেষ্টা প্রকৃতির বিরুদ্ধে প্রযোজিত হইয়া থাকে এবং কখন কখন ইহাকে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যতিক্রম[১] ঘটাইয়া কল্পিত পথে সগর্ব্বে অগ্রসর হইতে দেখা যায়। এই বিজয়দম্ভ যে বহুকালের নিমিত্ত নহে তাহা বিজ্ঞানসেবী নিঃস্বার্থ পক্ষিপালকমাত্রেই ধ্রুব জানেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ আমরা দেখিতে পাই যে,

  1. বিজ্ঞানসেবী পাশ্চাত্য পক্ষিপালকগণ কিন্তু বিহঙ্গজীবন লইয়া যাহা কিছু experiment করিতেছেন, তাহা প্রায়ই প্রকৃতির বিরুদ্ধগামী নহে। প্রকৃতির পন্থানুসরণে যে সকল কার্য্য সম্পাদিত হয়, তাহা চিরস্থায়ী; সুতরাং চিরস্থায়ী কার্য্যের উপায় উদ্ভাবনই তাঁহাদিগের মুখ্য উদ্দেশ্য। তজ্জন্য তাঁহারা খাদ্য-কৃত্রিমতার সাহাযো পক্ষীর ক্ষণস্থায়ী বর্ণ-বৈচিত্র্যের প্রতি লক্ষ্য না করিয়া পক্ষিমিথুনের সুনির্ব্বাচন, একত্র সংস্থাপন এবং তদবস্থায় সন্তানজননের ফলে পক্ষিশাবকের চিরস্থায়ী রূপান্তর সংসাধনে প্রয়াসী হইতেছেন।