পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
পাখীর কথা

 (গ) যদি তাহা হইত, তাহা হইলে যে পক্ষিশাবক অপর পক্ষীর বাসায় রক্ষিত ডিম্ব হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া ক্রমশঃ বাড়িয়া উঠে, সেও কালক্রমে স্বজাতীয় পক্ষিগণের বাসার অনুরূপ নীড় (অর্থাৎ তাহারা যে সকল উপকরণের সাহায্যে যে প্রকার বাসা তৈয়ারি করিয়া থাকে, সেই সকল মালমস্‌লা লইয়া ঠিক সেইরকম বাসা) অনায়াসে রচনা করিতে পারিত।

 (ঘ) পূর্ব্বপুরুষার্জ্জিত ক্ষমতার উত্তরাধিকারসূত্রে পক্ষিজাতি যদি এত বড় একটা জটিল কার্য্য করিতে সমর্থ হয়, তাহা হইলে স্বীকার করিতে হইবে যে, তাহারা স্বশ্রেণীর উপযোগী বাসা-নির্ম্মাণ-ব্যাপারে মানবজাতি অপেক্ষা অনেক অংশে শ্রেষ্ঠ; কারণ মানুষকে যদি নিজের tribe অথবা raceএর অনুরূপ গৃহ নির্ম্মাণ করিতে হয়, তাহা হইলে সে না দেখিয়া, শুনিয়া বা শিখিয়া কখনই তাহা করিতে পারিবে না!

 (ঙ) সহজসংস্কাৱজাত পাখীর বাসা চিরকালই এবং সর্ব্বত্রই সম্পূর্ণভাবে এক ধরণের হইত।

 (চ) কিন্তু তাহা হয় না; সাধারণতঃ বাসা রচনার দ্বারা পাখীরা

    সম্পাদিত হইল। Instinct যদি একমাত্র কার্য্যকরী শক্তি হইত, তাহা হইলে অনভিজ্ঞ বিহগদম্পতির সর্ব্বপ্রথম নীড় তাহার পরবর্ত্তী নীড়গুলির ন্যায় নিপুণ ও নিখুঁতভাবে রচিত হইত; নীড়গুলিও সর্ব্বত্রই স্বজাতির অনুরূপ মামুলী উপকরণ সাহায্যে বেশ গোছাল মামুলী ধাঁজের হইত, বিদেশীয় পাখীর বাসা অনুকরণ করিবার কোন প্রয়োজনই থাকিত না।

    মিঃ চার্লস্ ডিক্‌সন লিখিয়াছেন যে, ১৯০০ খৃষ্টাব্দে তিনি তাঁহার আপন উদ্যানে এক জোড়া তরুণ অনভিজ্ঞ থ্র্যাস্ (Thrush) পক্ষীর নীড়রচনার নিষ্ফল উদ্যম তিনবার লক্ষ্য করিয়াছিলেন; তৎকালে কিন্তু তাঁহার উদ্যানে আর এক জোড়া পরিণত বয়স্ক ঐ জাতীয় পক্ষী সামান্য চেষ্টায় প্রথম উদ্যমেই তাহার নীড় পরিপাটিভাবে রচনা করিয়া গার্হস্থ্য জীবনের সুখানুভব করিতেছিল। তরুণবয়স্ক অনভিজ্ঞ পক্ষিদম্পতির শেষ উদ্যম শুষ্ক ঘাসের এক কদাকার স্তূপে পর্য্যবসিত হইয়া তিনটি ডিম্বের আশ্রয়স্থল হইলেও পক্ষিমিথুন সন্তান উৎপাদনে বিফলপ্রযত্ন হইয়া তথা হইতে যে অবশেষে পলায়ন করিয়াছিল, তাহা ডিক্‌সন্ (Dixon) মহোদয় বিশেষরূপে লক্ষ্য করিয়াছলেন। Vide Bird’s Nests by Charles Dixon, Chapter I, p. 17.