পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৭১

সহসা সেই নারিকেল মালাটির প্রতি আকৃষ্ট হইয়া ফিঞ্চ-মিথুনকে নীড়চ্যুত করিল। সেই মালাটির মধ্যে এখন তাহারা গৃহস্থালী আরম্ভ করিয়া দিল। প্রত্যহই আমি তাহাদের জীবন-রীতি লক্ষ্য করিতেছিলাম; দেখিলাম তাহারা যথাসময়ে ডিম পাড়িল। কিছুদিন পরে দেখা গেল যে, দুটি ডিম ফুটিয়া দুটি বিভিন্ন জাতীয় পক্ষিশাবক বাহির হইয়াছে,—একটি সাদা রামগোরার বাচ্ছা, অপরটি ধূসর ফিঞ্চ-শাবক। মজা এই যে, ধাড়ি রামগোরা পক্ষিণীটি অপত্যনির্ব্বিশেষে উভয়কেই লালন করিতে লাগিল। এইরূপ ঘটনা বিরল নহে। আবদ্ধাবস্থায় পক্ষিগৃহমধ্যে পিদ্‌ড়ি মুনিয়া (Indian silverbill) জাপানী মুনিয়া কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া নীড় ছাড়িয়া পলাইতে বাধ্য হয়। নীড়চ্যুত মুনিয়ার পরিত্যক্ত ডিম্বগুলিকে তাহার জাপানী জ্ঞাতি সযত্নে ফুটাইয়া তোলে। শুধু কৃত্রিম পক্ষিগৃহ মধ্যে আবদ্ধাবস্থায় যে এইরূপ ঘটিয়া থাকে তাহা নয়; মুক্ত প্রকৃতির লীলাকুঞ্জে একের বাসা অন্যে কাড়িয়া লয়,—কাঠঠোক্‌রার বাসা সালিকের অধিকারে আসে, pheasant ও তিতির পরস্পরের বাসা অধিকার করিয়া পরস্পরের ডিম্বে তা দেয়, তালচঞ্চুর বাসায় চড়াইয়ের আবির্ভাব হয়। এই বিরোধকে আমরা স্বীকার করিয়া লইতে প্রস্তুত আছি; অতি প্রাচীন যুগ হইতে এই দ্বন্দ্ব-কলহ পক্ষিজগতে চলিয়া আসিতেছে, অথচ ইহারই ভিতর দিয়া পাখীকে আত্মরক্ষা করিবার উপায় আবিষ্কার করিতে হইয়াছে; যে পাখী সদুপায় অবলম্বন করিতে পারে নাই, সে লুপ্ত হইয়াছে। যে দিন পক্ষিদম্পতী প্রথম দেখিল যে, অপরে তাহার পরিত্যক্ত ডিমটিকে সযত্নে রক্ষা করে, সেই দিন হইতে তাহারা পরের উপর নির্ভর করিতে শিখিল। কালক্রমে ডিম্ব-প্রসবের পর তাহা ফুটাইয়া তোলার অভ্যাসটুকু পর্য্যন্ত তাহাদের নষ্ট হইয়া গেল;—পক্ষিজীবনের এই বিচিত্র biologic processএর মধ্যে পরভৃৎ-রহস্য বংশ-পরম্পরায়