পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা
৫৭

করিয়াছিলাম। এই নিমিত্ত আর কখন সে কথা উত্থাপন করি নাই। প্রত্যাখ্যান দিবসে আমি তোমার নিকটে ছিলাম না। থাকিলেও বরং যাহা শুনিয়াছিলাম, বলিতাম। রাঙ্গা, দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া, বাষ্পকুল লোচনে গাদ বচনে করিলেন বয়স! কার দোষ দিব, সকলই আমার অদৃষ্টের দোষ। এই বলিয়া অত্যন্ত শোকাকুল হইলেম। তখন মাধব্য কহিলেন বয়স! এরূপ শোকে অভিভূত হওয়া তোমার উচিত নহে। দেখ, সৎপুরুষেরাশোক মোহের বশীভূত হয়েন না। প্রাকৃত। জনেরাই শোক মোহে বিচেতন হইয়া থাকে। যদি উভয়েই বায়,ভরে বিচলিত হয় তবে বৃক্ষে ও পৰ্বতে বিশেষ কি? তুমি গম্ভীৱস্বভাব; ধৈর্য্য অবলম্বন করিয়া শোকাৰেগ সংবরণ কর।

 প্রিয়বয়স্যের প্রবোধবাক্য শ্রবণ করিয়া রাজা কহিলেন সখে? আমি নিতান্ত অবোধ মহি; কিন্তু মন আমার কোন ক্রমেই প্রবোধ মানে না। কি বলিয়াই বা প্রবোধ দিব। প্রত্যাখ্যানের পর, প্রিয় প্রস্থান কালে, সাতিশয় কাতরতা প্রদর্শনপূর্ব্বক, আমার দিকে যে বারংবার বাষ্পপূর্ণ দৃষ্টিপাত করিয়াছিলেন, সেই কাতর দৃষ্টিপাত আমার হৃদয়ে বিষলিপ্ত শস্যের ন্যায় বিদ্ধ হইয়া আছে। আমি সেই সময়ে তাহার প্রতি যে জুরের ব্যবহার করিয়াছি তাহা মনে করিয়া আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছে। মরিলেও আমার এ দুঃখ বিমোচন হইবে না। | মাধবপ্রাজাকে নিতান্ত কাতর দেখিয়া আশ্বাস প্রদানার্থে কহিলেন বসা অত কাতর হইও না। কিছু দিন পরে পুনর্ব্বার শকুন্তলার সহিত সমাগম হইবেক। রাজা কহিলেন বয়! আমি এক মূহুর্তের নিমিত্ত্বেও সে আশা করি না। আর আমি প্রিয়ার দর্শন পাইব না। এ জন্মের মত আমার সকল সুখ ফরাইয়া গিয়াছে। নতুবা, তৎকালে আমার তেমন দুর্ব্ব দ্ধি ঘটিল