পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যায়, এমন দুটাে-একটা তুচ্ছ সাধও কেন বাতিল হয়ে যাবে ? সুনীল কোন ভুলেও একদিন অল্প দামের একটি উপহার এনে কারো মুখে হাসি ফোটাবে না ? ছোট বােনটিকে দুটাে পুতুল কিনে দিলেই কি অচল হয়ে যাবে সংসার ? ভূপেশ তো সামান্য হাত-খরচের টাকা থেকে মেয়েকে পুতুল কিনে না দিয়ে পারে না ! এবং তাতে সংসারের অনটন বেড়েও যায় না । তবু হয়তো একটু কম হৃদয়হীন ভাবা যেত তাকে, বুড়ো মা-বাবা আর ভাইবােনদের তুচ্ছতম সাধ-আহ্নলাৰ্দও মেটাতে পারে না বলে একটু যদি স্নান দেখাত তার মুখ, একটু যদি সে আপশোষ করত । সে যেন গ্ৰাহও করে না ! বাধ্য হয়ে কঠোর হওয়ার জন্য এতটুকু মন খারাপ করার বালাই তার নেই ! কল্পনার একটি শাড়ী না হলেই নয় । কলেজে পরে যাবার কাপড় নেই । ওবাড়ীর মায়ার পরনের শান্ডী খান দেখে হঠাৎ কিছু অদম্য সাপই যে জাগল কল্পনার-যে, সেও ওই বকম শাড়ী পারবে । নাঞ্চলে বুক ফেটে মরে যানে । ওখানার দাম ষোল টাকা। সুনীল তাকে তেবে টাকার একখানা কাপড় কিনে দেবে। 晶 মা বলে, তিনটে টাকার মামলা তো, দে কিনে ! সুনীল মাথা নড়ে । এ মাথা নাড়ার মানে জানে কল্পনা। অনেক দিন পরে দাদার কাছে সে কেঁদে ফেলে বলে, তের টাকা যোল টাকা এত তফাৎ তোমার কাছে ? অনেক তফাৎ । তবে আরও কম দামের কিনে দাও । ঘরে পরিবার হলে তাই দিতাম। কলেজ যাবি না। এ কাপড় পরে ? এর চেয়ে কম দামের কাপড় পরিয়ে তোমায় কলেজে পাঠিয়ে লাভ নেই, অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবে আর পড়াশুনা মাটি করবে ।