পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্নেহ মায়া দুর্বলতা এসব হিসােব ধরছে। তুমি আমাকে থানিকটা যন্ত্রের মত বানিয়ে দিয়েছ, মানুষের সঙ্গে খাপ খেতে পারি না। কিছু ভাল লাগে না আমার, সব সময় কেমন একটা অস্থিরতা জেগে থাকে। মনে হয়, আমি একেবারে অপদার্থ, এ কাজটা বুঝি অন্যায় করলাম, ও কাজটা বুঝি উচিত হবে না আমার জন্য এটা হয়েছে ? তোমার জন্য। তুমি সব নিয়মে বেঁধে দিতে চাও। • জীবনে হাসি আনন্দ ফুতির এতটুকু দাম নেই তোমার কাছে। সব সময় সব ব্যাপারে মানুষকে সিরিয়াস হয়ে থাকতে হবে। এদিকে তোমার আবার খুব জোরালো পার্শোন্যালিটি —তার চাপে আমরা কুকড়ে গেছি। ভাইবোনদের তুমি স্বাভাবিকভাবে মানুষ করতে পার নি । সুনীল একটু সময় চুপ করে ভাবে। শান্তভাবেই বলে, আচ্ছা, কথাটা একটু অন্য ভাবে বিচার করা যাক। আমাদের মধ্যবিত্ত ভদ্র সমাজে চরম ভাঙ্গন ধরেছে, জীবনে বিকার আর অস্বাভাবিকতা এমনিতেই খুব বেশী দেখা যাচ্ছে। আমি “তোমাদের ভাবপ্রবণতার পথে সহজে ভেসে যেতে না দিয়ে খানিকটা বাস্তব বুদ্ধি, বাস্তব বিচার এনে দিয়েছি।-হৃদয়মন একটু শক্ত করে দিয়েছি। স্রোতে ভেসে যেতে দিলে তুমি হয় তো এই সংঘাতটুকু টের পেতে না-ভেসেই যেতে । তুমি যদি বুঝতে চাও আমি তোমায় অঙ্ক কযে দেখিয়ে দিতে পারি-আমি একটু শক্ত না হলে সংসারটাই ভেসে যেত! এখনও তুমি যেটুকু ভদ্রভাবে চলতে ফিরতে পারছি, কলেজ বাচ্ছ, এসব কিছুই পারতে না । তোমার যে কিছু ভাল লাগে না, সেটা অবস্থার দোষ, আমার শিক্ষার দোষ নষ । ভাঙনের অবস্থাটা ভাল লাগা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, কেউ কেউ ফাকি দিয়ে, এটা ওটা দিয়ে নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে, এই পৰ্য্যন্ত । এ অবস্থাটা ভাল লাগছে না, তুমি একটা পরিবর্তন চাইছ, জীবনটা তোমার কাছে সস্তা নয়-এটাই তোমার ভিতরের অস্থিরতার কারণ হতে পারে না ? অনিল স্নানভাবে একটু হাসবার চেষ্টা করে। A 3* ՝