পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নন্দার জীবন কাহিনী জানিবার জন্য সুনীল বিন্দুমাত্র কৌতুহল দেখায় নি। তবে, নন্দা নিজে থেকে যা জানিয়েছে সে মন দিয়ে শুনেছে। কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য করে নি । নন্দ ভেবেছিল, বয়স বেশী হলেও বেশভূষা থেকে সুনীল তাকে কুমারী বলেই SFR তার বিয়ে হয়েছিল, সে পাঁচ ছ' বছর স্বামীর ঘর করেছে তার স্বামী যুদ্ধে সৈনিক হলেও যুদ্ধের সংবাদ সরবরাহ করার কাজে গিয়ে মারা পড়েছিল। বোমা বা গুলিগোল খাওয়ার বদলে বুনো একটা মেয়ের সঙ্গে পীরিত করতে গিয়ে, তার জঙ্গুলো অসভ্য স্বামীর সেকেলে ভুজলির ঘায়ে, মারাত্মক রকম আহত হয়ে সে মায়া গিয়েছিল। নন্দার ধারণা ছিল এসব কাহিনী শুনে সুনীল চমকে যাবে। সুনীল শান্তভাবে শুধু বলেছিল, এরকম কত ব্যাপার যে ঘটেছে! অন্য অনেক রকম হিসাব তো আছেই, যুদ্ধের জন্য কত লাখ মেয়ে যে স্বামী হারিয়েছে। গা জলে গিয়েছিল নন্দার । • ছেলে হারায় নি ? হারিয়েছে বৈকি। ছেলে হরোনো মেয়েদের সয় । ছেলে মেয়ে বাইপোডাক্ট তো। স্বামী হারালেই সর্বনাশ । নন্দা খানিকক্ষণ কথা বলতে পারে নি। তার বিয়ে হয়েছিল, সে স্বামীর সংসার করেছে, এসব শুনে না হয় চমক নাই লাগল সুনীলের, মৃত স্বামীর বুনো মেয়ের সঙ্গে পীরিত করতে গিয়ে প্ৰাণ হারাণোর কাহিনী যে সে এমন অনায়াসে শুনিয়ে দিল, এতে একটু আশ্চৰ্য্য হওয়া তো উচিত ছিল তার ! গলার সুর পাণ্টে সে বলেছিল, মানুষটা খারাপ ছিল ভাববেন না। কিন্তু । না। যুদ্ধের ব্যাপারে জড়িয়ে ঘরবাড়ী ছেড়ে পাহাড়ে জঙ্গলে গিয়ে একজন একদিন একটা অনাচার করেছিল, এ থেকে কি বিচার করা যায় মানুষটা ভাল না খারাপ ছিল ? তাছাড়া আপনিও হয় তো জানেন না ঠিক কি ঘটেছিল। 仓>