পাষাণের কথা
সহস্র বর্ষব্যাপী শত শত বিপ্লবে আর্য্য উপনিবেশ বিধ্বস্ত হইয়া গিয়াছিল, জনসঙ্কুল প্রদেশসমূহ অরণাসঙ্কুল হইয়াছিল, শত শত প্রাচীন নগরের ধবংসাবশেষ উত্তরাপথ ও দক্ষিণাপথের মধ্যবর্ত্তী প্রদেশ আচ্ছন্ন করিয়াছিল। কালক্রমে অনার্য্যবংশসম্ভূত বর্ব্বর জাতিসমূহ এই বনময় রাজ্য অধিকার করিয়াছিল। সন্ন্যাসিগণ ভীষণ অরণ্যমধ্যে নির্ভয়হৃদয়ে ভ্রমণ করিতেন, আভীরগ্রাম হইতে গ্রামান্তরে গমন করিয়া বর্ব্বরগণকে শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করিতেন। তাঁহাদিগের পবিত্রতা, সংযম, নিষ্ঠা ও শিক্ষা সর্ব্বত্রই তাঁহাদিগকে ভক্তিভাজন ও আদরণীয় করিয়া রাখিয়াছিল। মৃগয়াজীবী গোখাদক আভীর পশুহত্যা পরিত্যাগ করিয়া গোপালের সাহায্যে ভূমিকর্ষণে প্রবৃত্ত হইয়াছিল, পশুচর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া কার্পাসনির্ম্মিত বস্ত্র পরিধান করিতে শিথিয়াছিল, সচ্ছলতার সময়ে অস্বাভাবিক পানাহার ও অভাবের সময়ে অনশন পরিত্যাগ করিয়া ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করিতে শিথিয়াছিল। সন্ন্যাসিগণের উদ্যমে আটবিক প্রদেশে মুদ্রার প্রচলন, বিপণী স্থাপন প্রভৃতি কার্য্য অনুষ্ঠিত হইতেছিল, আটবিক প্রদেশে ক্রমশঃ সুশাসন প্রবর্ত্তিত হইতেছিল। উত্তরাপথের রাজগণের সমবেত চেষ্টায় যাহা সফল হয় নাই মুষ্টিমেয় সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর চেষ্টায় তাহা সিদ্ধ হইয়াছিল। আটবিক প্রদেশের অধিবাসিগণের বর্ব্বর নামও এই সন্ন্যাসিগণ কর্ত্তৃক দূরীভূত হইয়াছিল। পূর্ব্বে উত্তর বা দক্ষিণ হইতে তীর্থযাত্রিগণ প্রাণভয়ে প্রাচীন স্তূপে আসিত না; সুদীর্ঘ বনপথ অতিক্রমকালে বর্ব্বরগণ যাত্রিগণের ধনলুণ্ঠন ও জীবননাশ করিয়া পথচারণ অতি বিপজ্জনক করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু যেমন সময় অতিবাহিত হইতেছিল তেমনই বর্ব্বরগণ প্রাচীন আর্য্য সভ্যতায় দীক্ষিত হইতেছিল। যাহারা বন্য মৃগ হনন করিয়া জীবিকা নির্ব্বাহ করিত, তাহাদিগের প্রজা সন্ন্যাসিগণের
১৫০