পাষাণের কথা
তথাগতের দেহাবশেষ রক্ষিত হইবে; সুদূর পর্ব্বত হইতে নির্ম্মাণকার্য্যের জন্য রক্তবর্ণ প্রস্তর আনীত হইবে; সুদূর উদ্যান, গান্ধার ও কপিশা হইতে যবন শিল্পী আসিয়া নূতন ও পুরাতন ভাস্কর্য্যমিশ্রিত নব প্রথায় স্তূপবেষ্টনী নির্ম্মাণ করিবে। শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যময় পর্ব্বতসানু হইতে বহু বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া অশ্মরাশি সঞ্চিত হইয়াছে। উত্তর পশ্চিম প্রদেশ হইতে যবন শিল্পী এবং মগধ ও মথুরা হইতে দেশীয় ভাস্করগণ আনীত হইয়াছে; স্তূপও নির্ম্মিত হইয়াছে; তাহাদিগের মধ্যে অনেকেই অর্থ প্রদান করিয়াছে বা বিনা পারিশ্রমিকে পরিশ্রম করিয়াছে, অথচ তাহারা স্তূপ দেখিতে পাইবেনা বা বেষ্টনীর অভ্যন্তরে যাইতে পারিবে না, ইহা তাহাদিগের নিকট অবিচার বলিয়া বোধ হইল। পরামর্শান্তে রাজসমীপে আহূত নাগরিকগণ জনসঙ্ঘের মধ্যে প্রবেশ করিয়া প্রচার করিতে লাগিলেন যে, সপ্তাহান্তে স্তূপগর্ভে তথাগতের শরীর নিহিত হইবে; সেই দিন নগরে অষ্টপ্রহরব্যাপী উৎসব হইবে ও সেইদিন প্রাতঃকাল হইতে সকলেই বেষ্টনীর অভ্যন্তরে প্রবেশের ও অর্চ্চনার অধিকার লাভ করিবে। তাঁহারা জানাইলেন যে, রাজা তখনও ব্রাহ্মণগণের উপদ্রবের আশঙ্কা করেন; কারণ ইতোমধ্যে তাহারা দুই একবার বিপৎপাতের চেষ্টা করিয়াছে; সুতরাং অসম্বদ্ধ জনপ্রবাহ বেষ্টনীর অভ্যন্তরে ছাড়িয়া দিলে তাহারা অবসর পাইয়া নূতন কি উৎপাত করিবে তাহা বলা যায় না। বিশেষরূপ বিবেচনা করিয়া তাঁহারা সকলকে বেষ্টনীর অভ্যন্তরে প্রবেশলাভের অনুমতি দিবার বিরোধী হইয়াছেন। তাঁহারা আরও বলিলেন যে, অপর সকলের ন্যায় তাঁহারাও স্তূপ দেখিবার আশায় নগর পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছিলেন; কিন্তু অবস্থা বিবেচনা করিয়া তাঁহারাও প্রত্যাবর্ত্তন করিতেছেন। তখন সেই বিশাল জনসঙ্ঘ নগরে প্রত্যাবর্ত্তন করিল।
৩৮