পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নুরন্নেহা ও কবরের কথা

 নূরুন্নেহা ও কবরের কথা পালাটি শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী ১৯২৮ সনে সংগ্রহ করেন। গানটি ৬৩২ পঙ্‌ক্তিতে সম্পূর্ণ। আশুবাবু সের আলি খাঁ নামক বড় উঠান গ্রামের জমিদারের নিকট প্রথম পালা গানটির সংবাদ পান। ‘বড় উঠান’ গ্রামটি দেওয়াং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। সের আলি খাঁ হয়বৎ আলি নামক এক গায়কের কথা আশুবাবুকে বলেন। হয়বৎ আলির ডাক নাম ‘কাদিরের বাপ’ কিন্তু ইহাকে কোথায় পাওয়া যাইবে? এই গায়ক একটি আশ্চর্য্য লোক। নদী এবং সমুদ্রই তাহার বাড়ী। সে প্রায়ই চালা ঘরে থাকে না—জলেই আহার, জলেই শয়ন। বহু কষ্টে পেস্কারের হাট নামক গ্রামে আশুবাবু ইহার সাক্ষাৎ লাভ করেন। হয়বৎ আলির একখানি সাম্পান আছে। সে এখন বৃদ্ধ। আশুবাবু তাহার সাম্পান ভাড়া করেন। একটি ক্ষুদ্র নদীর পথে আট ঘণ্টা কাল হয়বৎ আলি এই পালা গানটি গাহিয়া গিয়াছিল। তাহার মাথায় একটা বেতের টুপি এবং সে দাঁড়ের দ্বারা তরঙ্গ অভিঘাত করিয়া গাহিবার সময় তাল ঠুকিতেছিল। বৃদ্ধ হইলেও তাহার কণ্ঠ কোকিলের ন্যায় মিষ্ট। নদীর দুই দিক্ হইতে কৃষকেরা সেই গান শুনিতে নৌকার কাছে আসিয়া জড় হইয়াছিল। হয়বৎ বলিয়াছে, “বাবু, এই নদী আমার বড় প্রিয়। ইহাই আমার এই গানের প্রধান রঙ্গশালা। এই গান গাহিয়া এই নদীর উপরে আমি যে কত কাঁদিয়াছি ও লোককে কাঁদাইয়াছি তাহার অবধি নাই। নূরুন্নেহা একটি পরীর ন্যায় আমার মন আকর্ষণ করে। জীবনের শেষদিন পর্য্যন্ত যেন এই গান করিতে করিতে আমি প্রাণত্যাগ করিতে পারি।”

 সেই দেশের লোকেরা বলিয়াছে, “হয়বতের সুরলহরীর সহিত তাহারা আশৈশব পরিচিত। হয়বতের গান তাহদের জীবনের একটি প্রধান আনন্দোৎসব।”

৬৩