পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রাবতীর রামায়ণ
৫২১

এবং রামায়ণ এই তিনটি মাত্র কাব্য তাঁহার রচনা নহে, তিনি তাঁহার পিতাকে পদ্মাপুরাণ লিখিতে বিশেষ সাহায্য করিয়াছিলেন। বংশীদাস-কৃত পদ্মাপুরাণে চন্দ্রাবতীর লেখা অনেকাংশ দৃষ্ট হয়। প্রেমভঙ্গে ব্যথিত চিত্তকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এই রামায়ণ রচনায় তিনি প্রবৃত্ত হন। তাঁহার পিতার আদেশেই তিনি এই ভার গ্রহণ করেন। এ সমস্ত কথাই নয়ানচাঁদ কবি বিস্তৃতভাবে লিখিয়া গিয়াছেন। কেনারামের পালায় চন্দ্রাবতী স্বয়ং তাঁহার পিতা ও স্বীয় গৃহ-সম্বন্ধে যে সব কথা লিখিয়াছেন, তাহার সঙ্গে নয়ানচাঁদের বর্ণনার বিশেষ ঐক্য আছে। কেবল তাঁহার প্রণয়-কাহিনীটি তিনি সঙ্কোচের সহিত বাদ দিয়া গিয়াছেন এবং সেই কাহিনীর সবিস্তার বর্ণনাও আমাদিগকে নয়ানচাঁদ দিয়াছেন। চন্দ্রাবতী আজন্মকুমারীই রহিয়া গিয়াছিলেন। শৈশব-সঙ্গীর প্রতারণার পরে তিনি সাংসারিক সুখের আর কোন আশাই রাখেন নাই এবং এই রামায়ণ লিখিতে লিখিতেই অকালে তাঁহার মৃত্যু হয়। ১৫৭৫ খৃষ্টাব্দের কিছু পরে তাঁহার দুঃখান্ত জীবনের উপর পটক্ষেপ হইয়াছিল। এই রামায়ণের ইংরাজী ভূমিকায় আমরা তাঁহার সম্বন্ধে আরও অনেক কথা লিখিয়াছি।

 চন্দ্রাবতীর রামায়ণের কবিত্বই ইহার প্রধান গুণ নহে। এই রামায়ণে আমরা এমন অনেক জিনিষ পাইতেছি যাহাতে রামায়ণ-সাহিত্যের কতকগুলি আঁধার দিক্ আলোকিত হইয়া যাইতেছে। বৌদ্ধ জাতকের সঙ্গে রামায়ণের এতটা অধিক সাদৃশ্য রহিয়াছে যে একথা আমাদের স্পষ্টই ধারণা হইয়াছে—উভয়েই হয়ত কোন অজ্ঞাত মূল হইতে গৃহীত হইয়াছে নতুবা ইহারা পরস্পরের নিকট ঋণী। দশরথ-জাতককে আমরা বাল্মীকির পূৰ্ববর্ত্তী বলিয়া মনে করিয়াছি; তৎসম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য “The Bengali Ramayanas” নামক পুস্তকে বিস্তারিত ভাবে প্রদত্ত হইয়াছে। দশরথ-জাতক ছাড়া সাম জাতকে অন্ধমুনির কাহিনীটি ঠিক বাল্মীকির অনুরূপ ভাবেই লিখিত হইয়াছে। সম্বুলা জাতকের রাক্ষস নায়িকাকে যে সব ভীতি প্রদৰ্শন করিয়াছে অশোকবনে সীতার প্রতি রাবণের উক্তি ঠিক তদনুরূপ। বসন্তরা জাতকে বসন্তরার উক্তি এবং প্রত্যুক্তি বনবাসের

৬৬