পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রাজা তিলকবসন্ত

 এই পালাটি চন্দ্রকুমার দে মহাশয়ের সংগ্রহ। ইহা তিনি সমাজঝিকরলো অঞ্চলে রামচরণ বৈরাগী ও কতকাংশ লোচনদাসের নিকট পাইয়াছেন।

 যদিও আমরা এই গানটি পালাগানের ধরনে পাইতেছি, তথাপি ইহাতে কিছু কিছু ব্রাহ্মণ্য-প্রভাব যে পড়িয়াছে তাহা সহজেই দেখা যায়। বাঙ্গালা মহাভারতে শ্রীবৎস ও চিন্তার উপাখ্যানটি কোন সংস্কৃত পুরাণ হইতে গৃহীত কিনা ইহা ৺রামগতি ন্যায়রত্ন মহাশয় বিশেষ করিয়া খুঁজিয়াছিলেন কিন্তু এগুলি বাঙ্গালাদেশেরই কথা, পল্লীগীতিকা। ইহার সন্ধান সংস্কৃত সাহিত্যে কখনই মিলিবে না। বিদেশী বণিক্ কর্ত্তৃক সতীসাধ্বী মহিলারা এই ভাবে বাঙ্গালী-প্রচলিত রূপকথাগুলিতে যে কতবার লাঞ্ছিত হইয়াছেন তাহার অবধি নাই। বিপদে পড়িয়া সেই মহিলা সূর্য্য কিংবা অপর কোন দেবতার নিকট প্রার্থনা-পূর্বক দেহশ্রী নষ্ট করিবার জন্য কুষ্ঠব্যাধি বরণ করিয়া লইয়াছেন। রাজা কাঠুরিয়া সাজিয়াছেন এবং বাছিয়া বাছিয়া চন্দন কাষ্ঠ সংগ্রহ করিয়াছেন। আমাদের শৈশবে দিদিমা যে সুবৃহৎ স্বপ্নরাজ্য প্রস্তুত করিতেন, তাহাতে এইরূপ কাঠুরিয়া রাজা ও সাধ্বী মহিলার কথা আমরা বহুবার শুনিয়াছি। মহাভারতোক্ত নল-দময়ন্তীর উপাখ্যানের সঙ্গে এই তিলকবসন্তের গল্পের কতকটা মিল দেখিতে পাওয়া যায়। নল শনির অভিসন্ধিতে সর্বস্ব হারাইলেন, তিলকবসন্ত ‘করম পুরুষে’র অভিশাপে তদ্রূপ বিপন্ন হইয়াছেন। নলের শরীর বিবর্ণ হইল, এদিকে রাণীও কুণ্ঠগ্রস্ত হইলেন। কিন্তু আমার মনে হয় শ্রীবৎস-চিন্তার কাহিনীটি এই ধরনের গল্পের আদর্শ। রাণীকে জাহাজে ধরিয়া লইয়া যাওয়া, রাজার কাঠুরিয়া সাজা—এ সমস্তই শ্রীবৎস-চিন্তার গল্পে যেরূপ পাইয়াছি, তিলকবসন্তেও তাহাই। এজন্যই এ কথা বলা যায় যে