পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মলয়ার বারমাসী

 মৈমনসিংহ নেত্রকোনায় কেন্দুয়া থানার অধীন আওয়াজিয়া গ্রামে রঘুসুত নামক পাট্‌নিজাতীয় এক গায়েন বাস করিতেন। এখন তাঁহার বংশতালিকা দৃষ্টে পুরুষ গণনা করিয়া, রঘুসুতের সময় আড়াই শত বৎসর পূর্ব্বে বলিয়া নির্দিষ্ট করা যায়। এই রঘুসুত দামোদর, নয়নচাঁদ ঘোষ ও শ্রীনাথ বেণিয়া নামক তিনজন কবির সাহায্যে ‘কঙ্ক ও লীলা’ নামক পালাগানটি রচনা করেন। রঘুসুতের লেখাই এই পালাতে বেশী।

 এই পালাগানের মধ্যে যে সব কথা আছে তাহা মূলতঃ ঐতিহাসিক ঘটনা বলিয়াই মনে হয়। ইহার বর্ণনানুসারে বিপ্রপুর গ্রামে গুণরাজ নামক এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তাঁহার পত্নীর নাম বসুমতী। ইঁহাদেরই পুত্র আমাদের প্রসিদ্ধ কবিকঙ্ক। যখন শিশুর বয়স ছয়মাস মাত্র, তখন বসুমতীর মৃত্যু হয় এবং সেই শোকে তাঁহার পিতা গুণরাজও পাগল হইয়া যান এবং কিছুদিনের মধ্যেই দেহত্যাগ করেন। পিতামাতাকে বধ করিয়াছে সুতরাং শিশু অপয়া, এই সংস্কারবশতঃ সেই অনাথ বালকের প্রতি কাহারও অনুকম্পা হইল না। নিরাশ্রয় শিশু একা এক ঘরে শুইয়া চীৎকার করিয়া কাঁদিতে লাগিল। কুসংস্কারের পাষাণ-প্রাচীর ভেদ করিয়া সেই চীৎকার কাহারও কর্ণে প্রবেশ করিল না। কিন্তু আভিজাত্য ও শাস্ত্রজ্ঞানের অভিমানে অন্ত্যজ শ্রেণীরা তাহাদের হৃদয় হারাইয়া ফেলে নাই। মুরারি নামক এক চণ্ডাল শিশুটিকে কোলে তুলিয়া লইল এবং তাহার পত্নী কৌশল্যা অতি যত্নের সহিত শিশুটিকে লালনপালন করিতে লাগিল। এইখানে আমরা রঘুসুত কবির দুইটি ছত্র উদ্ধৃত করিতেছিঃ—

“ব্রাহ্মণ কুমার হল চণ্ডালের পুত।
কর্ম্মফল কে খণ্ডায় কহে রঘুসুত॥”