পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

কিন্তু পাঁচবৎসর না যাইতেই ত্রিদোষযুক্ত জ্বরে আক্রান্ত হইয়া চণ্ডাল মুরারি প্রাণত্যাগ করিল। দিনরাত্র কৌশল্যা স্বামীর জন্য কাঁদিয়া কাঁদিয়া স্বর্গবাসিনী হইল। সেই শ্মশানের ভস্মের উপর পাড়িয়া পঞ্চবৎসর বয়স্ক কঙ্ক কঁদিতে লাগিল। এবার সে যে অপয়া তাহার একেবারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হইয়া গিয়াছে, সুতরাং কেহ আর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল না।

“কেহ নাহি হাত ধরে নেয় ফিরে ঘরে।
ভাত পানি দিয়া কেহ জিজ্ঞাসা না করে॥”

 কিন্তু তখনও প্রকৃত ব্রাহ্মণ সমাজে ছিলেন, যাঁহাদের জ্ঞান সমুদ্রের মতই গভীর এবং হৃদয় আকাশের মতই উদার। বিপ্রগ্রামবাসী গর্গ ছিলেন সেইরূপ একজন সর্ব্বজনপূজ্য ব্রাহ্মণ। তিনি রাজরাজেশ্বরী নদীতে স্নান করিয়া শ্মশানের পথ দিয়া গৃহে ফিরিতেছিলেন, এই সময়ে সেই শিশুর ক্রন্দনে আকৃষ্ট হইয়া তথায় উপস্থিত হইলেন। তাঁহার পবিত্র নামাবলী দিয়া সেই ‘চণ্ডাল-শিশু’র মুখ মুছাইয়া তিনি অতি যত্নে তাহাকে কোলে করিয়া লইয়া আসিলেন এবং তঁহার পত্নী গায়ত্রী দেবীর উপর সেই শিশুর ভার অৰ্পণ করিলেন। গায়ত্রী দেবীর পুত্র ছিল না এবং কঙ্কও মাতৃহীন। কবি লিখিয়াছেনঃ—“পুত্রহীনা পুত্র পাইলো—মাতা মাতৃহীনা।” চণ্ডালী কৌশল্যা সেই শিশুর নাম রাখিয়াছিল কঙ্ক, নাম রাখিলেন—“গোপাল।” গায়ত্রী দেবীর পরম স্নেহে কঙ্ক লালিতপালিত হইলেন। এদিকে গৰ্গ দেখিলেন, ছেলেটি অসাধারণ মনস্বী সুতরাং তাহার দশবৎসর বয়সে তাহাকে হাতে খড়ি দিয়া পড়াইতে আরম্ভ করিলেন এবং মুখে মুখে নানা শ্লোক শিখাইয়া ফেলিলেন। গর্গের একটি সুরভি নাম্নী গাভী ছিল। দিনের বেলায় কঙ্ক সেই গাভী চরাইত ও বাঁশী বাজাইত, কিন্তু রাত্রিকালে সে অতি মনোযোগের সহিত গর্গের নিকট সর্ব্বশাস্ত্রের পাঠ লইত। কিন্তু কঙ্কের দুঃখের এইখানেই শেষ হয় নাই। বসন্ত রোগে গায়ত্রী প্রাণত্যাগ করিলেন,