পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৪
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

উল্লেখ এই কাব্যে নাই, কারণ কাব্য তাহার পূর্ব্বে লেখা হইয়াছিল। কিন্তু আমরা মনে করি পূর্ব্ববর্ত্তী অংশের ন্যায় পরবর্ত্তী ঘটনাও সম্পূর্ণ ইতিহাসমূলক। লীলার প্রেম-সম্বন্ধে যে সমস্ত বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহার মধ্যে কতকটা কবি-কল্পনা অবশ্যই আছে, কিন্তু মূল ঘটনা বর্ণনাকালে কবিরা ইতিহাসের পথ সাবধানে অনুসরণ করিয়াছেন, ইহাই মনে হয়। কঙ্ক যে শ্মশান-ঘাটে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়াছিলেন, এ কথাটা খুব বিশ্বাসযোগ্য নহে, কারণ ‘কঙ্ক ও লীলা’র আরও কয়েকটি সংস্করণ আছে তাহাদের সঙ্গে এই পালার মূলতঃ কোন পার্থক্য নাই।—কেবল শেষভাগে কোন কোন কাব্যে কবিরা কঙ্কের সহিত লীলার যুগল-মিলন ঘটাইয়া কাব্যখানি “মধুরেণ সমাপয়েৎ” করাইয়াছেন, কেহ-বা কঙ্কের সহিত লীলার স্বর্গের ওপারে মিলন ঘটাইয়াছেন। আমাদের মনে হয়, যে জনরব রাষ্ট্র হইয়াছিল তাহাই সত্য। চৈতন্য-দর্শনকামী কঙ্ক ঝড়ে নৌকাডুবি হইয়া মারা গিয়াছিলেন। গৰ্গ শিষ্যদ্বয়কে কঙ্কের অনুসন্ধানে পাঠাইয়া এই কথাগুলি বলিয়াছিলেনঃ—

“কিন্তু এক কথা মোর শুন দিয়া মন।
গৌরাঙ্গের পূর্ণভক্ত হয় সেই জন॥
যে দেশে বাজিছে গৌর-চরণ-নুপূর।
সেই পথ ধরি তোমরা যাও ততদূর॥
যে দেশেতে বাজে প্রভুর খোল করতাল।
হরিনামে কাঁপাইয়া আকাশ পাতাল॥
সেই দেশে কঙ্কর করিও অন্বেষণ।
অবশ্য গৌরাঙ্গ-ভক্তের পাবে দরশন॥
যে দেশে গাছের পাখী গায় হরিনাম।
নাম সংকীর্ত্তনে নদী বহে যে উজান॥
শিষ্য-পদধূলি-মেঘে ছাইছে গগন।
সে দেশে অবশ্য কঙ্কের পাবে দরশন॥”