পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মলয়ার বারমাসী
৫৫৩

মত হইলেন। তিনি তাঁহার প্রিয় শিষ্য বিচিত্র-মাধব দুইজনকে দেশবিদেশে কঙ্কের সন্ধানে পাঠাইয়া দিলেন;—বলিলেন, ‘আমি তোমাদিগকে অতি যত্নের সহিত পড়াইয়াছি। আমাকে এই দক্ষিণা দিয়া আমার প্রাণরক্ষা কর। কঙ্ককে না পাইলে আমি বাঁচিব না।’ তাহারা দুইবার নানা দেশে ঘুরিয়া কঙ্কের সন্ধান পাইল না। শেষবার মাধব আসিয়া একটা জন রবের কথা বলিল। কঙ্ক চৈতন্যকে দর্শন করিবার অভিপ্রায়ে নবদ্বীপাভিমুখে রওনা হইয়াছিল, পথে ঝড়ে নৌকাডুবি হইয়া সে প্রাণত্যাগ করিয়াছে। লীলা কঙ্কের শোকে মৃতপ্রায় হইয়াছিল। এই আঘাত সে সহ্য করিতে পারিল না। তাহার মৃত্যু হইল এবং গর্গও বিপ্রগ্রামের গৃহ-পাট উঠাইয়া একান্ত অনুরক্ত কয়েকটি শিষ্যের সহিত পুরীর দিকে চলিয়া গেলেন।

 রঘুসুত প্রভৃতি কবিরা লিখিয়াছেন যে যখন লীলার দেহ শ্মশানে ভস্মীভূত হইতেছিল তখন কঙ্ক সেই শ্মশানের নির্ব্বাণোন্মুখ স্ফুলিঙ্গ দেখিতে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন।

 এই পালাগানের প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনাই ঐতিহাসিক। বিপ্রগ্রাম কেন্দুয়া পোষ্ট অফিসের অধীন। ইহার বর্ত্তমান নাম বিপ্রবর্গ। রাজেশ্বরী এখন শুকাইয়া গিয়াছে, কিন্তু তাহার খাদের চিহ্ন এখনও কর্ত্তমান। যেখানে পীর তাঁহার আস্তানা করিয়াছিলেন সে স্থান এখনও ‘পীরের স্থান’ নামে প্রসিদ্ধ। তথায় একটা পাথর আছে, উহাকে লোকে ‘পীরের পাথর’ বলে। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই এই পাথরের উপর সিন্নি দিয়া থাকেন। কঙ্কের প্রণীত ‘মলয়ার বারমাসী’ অসম্পূর্ণভাবে সংগৃহীত হইয়াচে, তাহাই এইখানে প্রকাশিত হইল। বারমাসী বর্ণনায় কবির শক্তি বেশ ফুটিয়া উঠিয়াছে। এই কবিতা চণ্ডীদাসের একশতাব্দী কাল পরে লিখিত হইয়াছিল। ইহা আমাদের প্রাচীন সাহিত্যের একটি সম্পদ্। পীরের আদেশে কঙ্ক যে সত্যপীরের গান লিখিয়াছিলেন, তাহাও আমরা পাইয়াছি। এই গান যখন লিখিত হয়, তখনও কঙ্কের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণদের কোন ষড়যন্ত্র হয় নাই। ইহাতে কঙ্ক সংক্ষেপে যে আত্মবিবরণী দিয়াছেন, তাহা নিম্নে উদ্ধৃত হইল। পাঠক দেখিবেন রঘুসুত প্রভৃতি কবিরা তৎ সম্বন্ধে যাহা যাহা লিখিয়াছিলেন কবি স্বয়ং তাহাই বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য পরবর্ত্তী ঘটনার

৭০