পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরীবানুর হাঁহলা
৫৬১

 আমরা এক বৎসর পূর্ব্বেই পরীবানুর একটা গান প্রকাশিত করিয়াছি; সেই গানের সঙ্গে এই পালাটি পাঠক মিলাইয়া পড়িবেন। এই গানে দৃষ্ট হয়, সুজা ও তাঁহার পত্নী আরাকান রাজ-কর্তৃক সমুদ্র-গর্ভে নিক্ষিপ্ত হইয়া প্রাণ ত্যাগ করেন নাই। যখন সুজা বুঝিলেন, আরাকান-রাজ তাঁহার পত্নীকে ছলে-বলে লইয়া যাইবেন এবং এ বিষয়ে তাঁহার বাধা দেওয়ার কোন সামর্থ্য নাই, তখন রাত্রিকালে কন্যা দুটিকে রাখিয়া রাজদম্পতী সমুদ্রের তীরাভিমুখে ছুটিলেন। সম্মুখে আকূল অতল জলরাশি, একখানি মাছের নৌকা সংগ্রহ করিয়া রাজা তাঁহার প্রাণপ্রিয়া পত্নীর সঙ্গে সমুদ্র বাহিয়া চলিলেন। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ-মালা, সুজা বাদসা নিজে কাণ্ডারী,—কি ভয়ানক কষ্ট সহিয়া যে সুজা পত্নীসহ সারারাত্রি কাটাইলেন, তাহা অনুভব করা যায়, বর্ণনা করা যায় না। ক্রমে ক্রমে হস্ত শিথিল হইল, সমুদ্রপথ অনেকটা বাহিয়া আসিয়াছেন—আর তো শক্তি নাই। এদিকে কালাপানির ভীষণ আবর্ত্তে নৌকা চক্রাকারে ঘুরিয়া পাতালের দিকে চলিল। বাদসাহ ও বেগম দুইজনে প্রেমালিঙ্গনে বদ্ধ হইয়া মৃত্যুর আলয়ে চলিলেন, এক সঙ্গে জলে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া আরাকানরাজের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিলেন।

 এই পালাগানটিতে অতি সংক্ষেপে করুণরসের ধারা অব্যাহত রাখিয়া সুজা বাদাসাহের শেষ কয়েকটা দিনের কাহিনী বর্ণিত হইয়াছে; ঘটনাগুলি সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক কিনা বলা যায় না—কিন্তু পরীবানুর অনুপম সৌন্দর্য্যই যে সুজার জীবনের এই বিসদৃশ পরিণতি ঘটাইয়া ছিল, তাহাতে সংশয় নাই।

 এই গানটিতে “বারবাঙ্গালা” শব্দটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি। “বারবাঙ্গালা” এক প্রকার গৃহের নাম, বাঙ্গালা দেশেই এইরূপ গৃহের সর্বপ্রথম পরিকল্পনা হইয়াছিল। ফার্গুসন সাহেব বলেন, দোচালা ঘরের মত ইহার ছাদ ছিল, এবং এইরূপ গৃহ বাঙ্গালা দেশের আদর্শে পৃথিবীর বহু স্থানে নির্ম্মিত হইয়াছিল। অনেকে মনে করেন বাঙ্গালা দেশের রাজধানীর নাম পূর্বকালে “বাঙ্গলা” ছিল—এই বাঙ্গলা নগরের নাম বিদেশী পর্য্যটকদের প্রাচীন গ্রন্থে দৃষ্ট হয়। এখন ইহার অস্তিত্ব নাই, কিন্তু সম্ভবতঃ ঢাকা নগরই এই প্রাচীন রাজধানী; ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ

৭১