পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা মৈমনসিংহ নেত্রকোণার অন্তঃপাতি ঠাকুরকোণা গ্রামবাসিনী সুলা নাম্নী মহিলা কবি কর্তৃক গোপিনী-কীৰ্ত্তন রচিত। ‘সুল” শব্দটি সুলক্ষণার অপভ্রংশ। এই রমণী আনুমানিক ইংরাজি ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দে নমঃশূদ্ৰকুলে জন্মগ্রহণ করেন ; পিতার নাম রামদেব ও মাতার নাম জয়তারা । রব এবং দুখিয়া নামক সুলার দুইটি ভ্রাতা ছিল। বিবিধ কারণে হিন্দুসমাজের উচ্চশ্রেণী হইতে নৃত্যগীতাদি কলাবিদ্যার চর্চা একেবারে উঠিয়া গিয়াছে। কোকিলের পক্ষে গান যেরূপ স্বাভাবিক, নারীদিগের পক্ষে নৃত্যগীতও সেইরূপই অপরিহার্ঘ্য স্বাভাবিক গুণ। সর্বদেশেরই মহিলারা কলাবিদ্যার চৰ্চা করিয়া থাকেন। আমাদের দেশে পাহাড়ীয়া জাতিদের মধ্যে এখনও নৃত্যগীতের চর্চা বিশেষরূপে বিদ্যমান। শুধু নিতান্ত দৈববিপৰ্য্যয়ে আমাদের মহিলা-সমাজ হইতে এই শোভন কলাবিদ্যার অনুশীলন তিরোহিত হইয়া গিয়াছে। হিন্দুরাজত্বকালে রমণীদের নৃত্যগীতাদি শিক্ষা অপরিহার্ঘ্য ছিল। “পদ্মিনী’ শ্রেণীর নারীদিগের "নৃত্যগীতানুরক্তি’ একটি সর্বপ্ৰধান গুণ বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। মহাভারতে রাজকুমারী উত্তরা অৰ্জ্জুনের নিকট নৃত্যগীতাদি শিক্ষা করিয়াছিলেন। বঙ্গদেশে এই বিদ্যার চৰ্চা যে এক সময়ে বিশেষরূপে প্ৰচলিত ছিল, তাহার উদাহরণস্বরূপ বেহুলার কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। বেহুলাকে সকলে “বেহুলা নাচুনী” বলিয়া ডাকিত। কৈশোর অতিক্ৰন করিবার পরও তিনি নৃত্যদ্বারা বাটীর সকলের মনােরঞ্জন করিতেন বলিয়া উল্লেখ আছে। কেতকাদাস লিখিয়াছিলেন “বেহুলার নৃত্য দেখি অমলা মোহ যায়।” অমলা, বেহুলার মাতা। সমস্ত ‘পদ্মাপুরাণে’ই দৃষ্ট হয়,—বেহুলা স্বৰ্গে যাইয়া দেবসভায় নৃত্যদ্বারা সমস্ত দেবতাদের মনােরঞ্জন कब्रिशांछिलन এবং তঁহাদের সহায়তায় মনসাদেবীর নিকট স্বামীর প্রাণভিক্ষা লাভ