পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

কোথায় পাব রাধে কোথায় পাব দড়ি। তোমার গলার হার দাও আর খোপা বান্ধা দড়ি।” এই ছত্রগুলির সঙ্গে মহুয়ার “লজ্জা নাই নিলাজ ঠাকুর লজ্জা নাইরে তর। গলায় কলসী বাঁধি জলে ডুবে মর। কোথায় পাব কলসী কন্যা কোথায় পাব দড়ি। তুমি হও গহিন গঙ্গা আমি ডুবে মরি।” (মহুয়া, ১০ পৃঃ) প্রভৃতি পদের বিশেষ ঐক্য দৃষ্ট হয়।

 পূর্ব্বে লিখিয়াছি বৈষ্ণব কবিগণের নিকট হইতে পল্লীকবিরা এই সমস্ত ভাব পান নাই। বৈষ্ণব কবিরা ও সম্ভবতঃ এই গ্রাম্য গীতিকা হইতে ঋণ গ্রহণ করেন নাই। পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদানের সম্বন্ধ না থাকিলে এই আশ্চর্য্য ঐক্য কি প্রকারে ঘটিল, এ প্রশ্নের সামাধান কিরূপে হইবে? আমাদের বিশ্বাস বাঙ্গালার গৃহ-প্রাঙ্গনে, দাম্পত্য-বাসরে, মেয়েলী ছড়ায়—প্রমোদ-বীথিকায় যে সকলা কথার হরিলুট হইতেছিল, পল্লীগায়ক ও বৈষ্ণবকবি ইহারা উভয়েই সেই বাঙ্গালীর প্রাণের মূলধন হইতে কথা সংগ্রহ করিয়াছিলেন। এই সকল কথা বাঙ্গালাদেশের হাওয়ায় পাওয়া, মুখে মুখে শোনা, ঘরের দাওয়ায় কুন্দ ফুলের মত অজস্র-বিলানো, ইহা কে কাহার নিকট হইতে পাইয়াছেন, তাহা বলা যায় না। বঙ্গের বধূরা কি ভাবে তাঁহাদের জীবন যাত্রার পথটি অজ্ঞাতসারে এইরূপ কথা-কুসুমাকীর্ণ করিয়াছিলেন, তাহা জানা যায় না। কিন্তু শত শত খ্যাত-নামা কবি যে এই সকল কথা-রত্ন বাড়ীতে বসিয়া কুড়াইয়া পাইয়াছিলেন, তাহাতে আমাদের সন্দেহ নাই।

 শুধু বৈষ্ণব পদে নহে, বঙ্গের প্রাচীন কবিগণের প্রায় সকলেই এই কথা-ভাণ্ডার হইতে ভাব ও ভাষা চয়ন করিয়াছিলেন। পল্লীগীতিগুলি ভালরূপ সন্ধান করিলে তাহা টের পাওয়া যাইবে। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দিতেছি। মইষাল বঁধুর একটি পদ এইরূপ “ভরা কলসীর জল জমিনে ফেলিয়া। জলের ঘাটে যায় কন্যা কলসী লইয়া” (১১।১২)—ডাকের বচনে অতি সংক্ষেপে এই কথাটি বলা হইয়াছে—“পানি ফেলি পানিকে যায়।” (বঙ্গসাহিত্য পরিচয় ১মভাগ ৮ পৃঃ) কঙ্ক ও লীলার “তুমি হও তরুরে বঁধু আমি হই লতা। বেইড়া রাখব যুগল চরণ ছাইড়া যাবে কোথা।” (প্রথম খণ্ড ২৫০ পৃঃ) পদটি ময়নামতির গানে অদুনার উক্তির অবিকল একরূপ—“তুমি হবু বট বৃক্ষ আমি তোমার লতা। রাঙ্গা চরণ বেড়িয়া রমু ছাড়িয়া