পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৯১

নঈকূলে” প্রভৃতি কবিতাগুলি যে মধুর রসে পুষ্ট, তাহার আদি খরবটা যেন এই পল্লীগাথায় পাওয়া যাইতেছে।

 চণ্ডীদাস সংস্কৃতে মহাপণ্ডিত হইলেও তিনি পুথিগত বিদ্যা সরাইয়া রাখিয়া ঘরের কথায় প্রাণের গীত গাহিয়াছেন। পালাগানগুলিও সেই ঘরের কথায় রচিত হইয়াছে। তাহাদের মধ্যেও বই-পড়াবিদ্যার এতটুকু চাকচিক্য নাই।

 শুধু চণ্ডীদাসের পদে নহে, পালাগানের অনেক পদের সঙ্গে আপরাপর বৈষ্ণব কবিদের গীতিকার বিশেষরূপ ঐকা দৃষ্ট হয়। জ্ঞানদাসের অতুলনীয় “ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী অবনী বহিয়া যায়” পদটির স্মারক বহু ছত্র প্রাচীন পালাগানে পাওয়া গিয়াছে, যথা:—“অঙ্গের লাবণী সোনাইর বাইয়া পড়ে ভূমে” (দেওয়ান ভাবনা, ২।১২)—“হাঁটিতে মাটিতে ভাসে অঙ্গের লাবণী” (ইশা খাঁ), “হাঁটিতে ভাঙ্গিয়া পড়ে অঙ্গের লাবণী” (ভেলুয়া) ধোপার পাটের “কাল দিন চল্যা গেল কা’ল হৈল কাল” (৯।৪২) ছত্রটি বিদ্যাপতির “কাল অবধি পিয়া গেল......ভেল পরভাত পুছই সবহুঁ। কহ কহ রে সখি কালি কবহুঁ” পদের প্রতিধ্বনির ন্যায়। লোচন দাসের “এস এস বঁধু এস, আধ আচরে ব’স” গানটির একটি ছত্র “ফুল নও যে কেশের করি বেশ।” পালাগানগুলিতে বাংরবার এই ভাবটি পাওয়া যায়, যথা:—“ফুল যদি হইতারে বঁধু ফুল হৈতা তুমি। কেশেতে ছাপাইয়া রাখতাম ঝাইরা বাইনতাম বেণী।” (মহুয়া, ৮।২২), “পুষ্প হইলে বঁধু খোপায় বাইনতাম তোরে” (দেওয়ান ভাবনা, ৪।২৬), এবং “পুষ্প হৈলে বঁধুয়ারে গাইথ্যা রাখতাম তোরে” (কমলা)। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে গোপাল উড়ে “গোবরা পোকা হৈয়া বসিলি পদ্মে” পদের দ্বারা শ্রোতৃবর্গেকে তাক্ লাগাইয়া দিয়াছিলেন। চতুর্দ্দশ শতাব্দীতে বিরচিত “ধোপার পাটে” আমরা এই ছত্রটি পাইতেছি “ভ্রমরা আছিলা তুমি হৈলা গোবরিয়া (৪।১৭)। আমরা “ধোপার পাটে”র ভূমিকায় পালা গানের সঙ্গে বৈষ্ণব কবিগনের রচনার এইরূপ আশ্চর্য্য ঐক্য সম্বন্ধে সংক্ষেপে যাহা লিখিয়াছিলাম তাহা এখানে কতকটা বিস্তৃত করিয়া লিখিলাম। আমরা দান-লীলার একটি পদে পাইয়াছি “আমার মত সুন্দর নারী কানাই যদি চাও। গলায় কলসী বান্ধি যমুনায় ঝাঁপ দাও॥ কলসী