পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৪৯

বাবরের এক কন্যাকে ইশাখাঁ বিবাহ করিয়াছিলেন। পালারচয়িতা দেওয়ান বংশের গৌরব ঘোষণার জন্য কল্পনার অবাধলীলা সহকারে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হুমায়ুনের সিংহাসনারোহণ উপলক্ষে যে দরবার হইয়াছিল সেই দরবারের দিন ইশাখাঁ সমাগত সামন্তবর্গের সমক্ষে স্বয়ং সিংহাসনে উপবেশন করিলে হুমায়ুন ভগিনীপতির এই বলদৃপ্ত ব্যবহারে ভীত ও সন্ত্রস্ত হইয়া তাঁহার সহিত এই মর্ম্মে সন্ধি করিলেন, যে তিনি তাঁহাকে সর্ব্বপ্রধান সামন্তরাজারূপে গ্রহণ করিবেন। এই আজগুবি কাহিনী সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কিছু লিখিবার প্রয়োজন নাই।

 ইশাখাঁকে দায়ুদের ভ্রাতা বলিয়া স্বীকার করিবার আমাদের অপর আপত্তি এই যে, ইশাখাঁ পূর্ব্বঙ্গের স্বাধীন নরপতি বলিয়া পরিগণিত হইলেও পূর্ব্বপুরুষাগত ‘দেওয়ান’ উপাধিই নামের সহিত সংযোগ করিয়া নিজেকে ‘দেওয়ান মসনদ আলি’ বলিয়া আখ্যাত করিতেন। দাউদ খাঁ ইশাখাঁর ভ্রাতা হইলে অপরাপর দেওয়ানদিগের ন্যায় তিনিও নিজেকে দেওয়ান দাউদ খাঁ বলিয়া পরিচিত করিতেন। কিন্তু “দেওয়ান দায়ুদ খাঁ” কোথায়ও পাওয়া যায় না; দায়ুদখাঁর মুদ্রায় পর্য্যন্ত তাঁহার ‘কাররাণি’ উপাধি দৃষ্ট হয়। অপরপক্ষে, ইশাখাঁকে কোথায়ও ‘কাররাণি’-উপাধি ভূষিত বলিয়া পাওয়া যায় নাই। দেওয়ান পরিবারের ইতিবৃত্ত ছাড়া কোথায়ও দায়ুদ খাঁর ‘ইসমাইল’ নাম পাওয়া যায় না। ইশাখাঁর ইসমাইল নামক এক ভ্রাতা ছিল; আইন ই আকবরীতেও তাহাই পাওয়া যাইতেছে। পরবর্ত্তী ঐতিহাসিকগণ দায়ুদকে ইশাখাঁর ভ্রাতা প্রমাণ করিবার জন্য তাঁহার ইসমাইল নাম দিয়া আর একটা জোড়া-তালি দিয়াছেন।

 ইশাখাঁর তিনটি বিভিন্ন বংশতালিকা পর্য্যালোচনা করিয়া আমরা তাহার মধ্যে নিম্নলিখিত বৈষম্য পাইতেছি। দেওয়ানদিগের প্রদত্ত বিবরণ অনুসারে ওয়াইজ় সাহেব লিখিতেছেন, ইশাখাঁর পিতা হুসেন সাহের কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। দেওয়ানদিগের ব্যয়ে প্রকাশিত “মসনদ আলি ইতিহাসে” পাওয়া যায় যে, ইশাখাঁর পিতা গিয়াসুদ্দিনের কন্যাকে বিবাহ করেন। দেওয়ানদের কাহারও কাহারও আদেশে বিরচিত আবদুল করিমের পালাগানে পাইতেছি যে ইশাখাঁ বাবরের জামাতা! এক হয় তিনটি বিবরণই