পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৫১

পাইয়াছি। রণ-ভাওয়ালের রাজা এবং সারাইল পরগণার ইশাখাঁ ইহাদের প্রত্যেকে আমাদিগকে এক হাজার করিয়া লোক দিয়াছেন। ভুলুয়ার বলরাম শূরও হাজার লোক দিয়াছেন। ............সুতরাং বাহির হইতে মোট ৭১০০ সাতহাজার একশত মজুর পাওয়া গিয়াছে। রাজা এবং জমিদারদিগের কেহ ভয়ে, কেহ ভালবাসার খাতিরে, কেহ বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য ত্রিপুরারাজের কার্য্যে লোক সরবরাহ করিয়াছেন। বারভুঞাদের প্রত্যেকেই লোক দিয়াছেন; দেন নাই কেবল তরপের রাজা।”

 তরপের ঔদ্ধত্যে অমর মাণিক্য কুপিত হইয়া তরপরাজ ফতেখাঁকে দমন করিবার জন্য যুবরাজ রাজধরের নেতৃত্বে বাইশ হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন। রাজধর তরপ-সেনাপতি শোভারাম ও তাহার পুত্রকে পরাস্ত করিয়া পিঞ্জরাবদ্ধভাবে উদয়পুর রাজধানীতে প্রেরণ করেন। অতঃপর ত্রিপুর-সৈন্য তরপের পাঠান রাজা ফতেখাঁকে দমন করিবার জন্য অগ্রসর হয়। এই সময় ত্রিপুরারাজের নৌসেনার অধিনায়ক ছিলেন ইসাখাঁ। অমর মাণিক্যের আদেশে বাঙ্গালী সেনাগণ ইশাখাঁর অধীনে যুদ্ধযাত্রা করে; তাহারা সুরমাই নদীবাহিয়া শ্রীহট্টে উপস্থিত হয়।

 অতঃপর আফগানরাজা ফতেখাঁ কিরূপে যুবরাজ রাজধর ও ইশাখাঁ কর্ত্তৃক পরাজিত হন, রাজমালার তাহার বিস্তৃত বিবরণ আছে। তাঁহাদের অধীনে যে সমস্ত বাঙ্গালী সেনানায়ক যুদ্ধ করিয়াছিলেন, এই বিবরণে তাঁহাদের নাম ও গুণপনার বিষয়ও বর্ণিত হইয়াছে। ফতেখাঁ আত্মসমর্পণ করিলে তাঁহাকে ১৫০৪ শকের ১লা মাঘ তারিখে অর্থাৎ ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি উদয়পুর আনা হয়। রাজা ইশাখাঁকে সম্মানিত করিবার জন্য একটি দরবার আহ্বান করিয়া প্রকাশ্যভাবে তাঁহার বীরত্বের প্রশংসা করেন এবং জামাতা দয়াবন্ত নারায়ণের বাম দিকে তাঁহাকে আসন প্রদান করেন।

 ইহার কিছুদিন পরে দিল্লী সাম্রটের একজন আমির (সম্ভবতঃ সাহবাজখাঁ) পূর্ব্ব-বঙ্গের পথে এক বিপুল বাহিনী সহ অভিযান করিয়া ইশাখাঁকে আক্রমণ করেন। ইশাখাঁ এই সময় নিশ্চয়ই সারাইল পরগণায় সুপ্রতিষ্টিত হইয়াছিলেন। এই বিপদে সামান্য হটিয়া গিয়া ইশাখাঁ অমর মাণিক্যের সাহায্য প্রার্থনা করেন।