পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>९९ ভারতধর্ষ | সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত। ভূ-তত্ত্ববিৎ ও প্রত্নতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা এ সম্বন্ধে যাহা সিদ্ধান্ত করেন, প্রাচীন তামিল-গ্রন্থে সেই মত পরিব্যক্ত দেখিতে পাই । ‘সিলাপ্পাদিকরম’ তামিলকাবা খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিরচিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। ঐ কাব্যে লিখিত আছে—পুরাকালে পারুলী নদী এবং কুমারী অন্তরীপের মধ্যে বিস্তৃত এক ভূ-খণ্ড ছিল ; সমুদ্র তাহ গ্রাস করিয়াছেন ; সেই ভূ-খণ্ডে কুমারী-অন্তরীপের দক্ষিণে সাত শত যোজন পরিমিত উনপঞ্চাশত বিভাগবিশিষ্ট এক জনপদ ছিল।’ ইরাইয়ানার’-বিরচিত “আগাপ্পোরুল’ গ্রন্থের ভূমিকায় তামিল-দেশের প্রসিদ্ধ কবি নিক্কিরীরাও এই কথাই লিখিয়৷ গিয়াছেন । তোলকাপ্লিয়াম’ গ্রন্থের ভূমিকায় এবং টীকায় "ইলামপুরানার’ এবং নাচ্চিনার কিনিয়াব’ যথাক্রমে ঐ কিম্বদন্তীরই সমর্থন করিয়ছেন । ফলতঃ, প্রাচীন তামিল-কাব্যে দ্রাবিড়ী-পণ্ডিতগণের মন্তব্যে এবং ভূ-তত্ত্ববিদগণের গবেষণায় বেশ বুঝা যায়,–বর্তমান লঙ্কাদ্বীপের দক্ষিণে বহুদুর-বিস্তৃত এক সুসভ্য জনপদ পুরাকালে বিদ্যমান ছিল ; প্রাকৃতিক বিপ্লবে সে জনপদ এক্ষণে সাগর-গর্ভে লীন হইয়াছে র্যাহারা মধ্য-এসিয়ায় অথবা উত্তরমরুতে মানবের আদি-জন্মভূমি বলিয়া নিৰ্দ্ধারণ কপিতেছেন, এই সকল সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই প্তাহাদের বিচার-বিতর্কের বিষযীভূত হইবে । যাহ। হউক, প্রাচীন সিংহল, যে কালে যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, পুরাকালে বাণিজ্য-সম্পদে ও ঐশ্বৰ্য্য-গৰ্ব্বে উহা যে গরীয়ান ছিল, নানারূপেই তাত প্রতিপন্ন হয় । ধৰ্ম্মপ্রচারকগণ ধৰ্ম্মপ্রচাব-ব্যপদেশে বিভিন্ন দেশে গতিবিধি করায় ভারতের বাণিজ্যের পথ নানাদিকে প্রশস্ত হইয়। আসিয়ছিল । আমর। পূৰ্ব্বেই প্রতিপন্ন করিয়াছি, এক সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র ভারতের সনাতন-ধৰ্ম্ম বিস্তুত হইয়াছিল, আর আজি ও তাহার ক্ষীণ পরিচয়-চিহ্ন ইউরোপে, আফ্রিকায়, এমন কি আমেরিকায় পর্য্যন্ত, লক্ষ্য করিতে পারা যায়। (“পুথিবীর ইতিহাস” প্রথম খণ্ডের একত্রিংশ পরিচ্ছেদে ৪৬৪ হইতে ৪৬৮ পৃষ্ঠায় এবং দ্বিতীয় খণ্ডের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আর্য্যগণের আধিপত্য-প্রসঙ্গে, এ সম্বন্ধে অনেক কথাই বলা হইয়াছে। এখানে তত্তদ্বিষয়ের পুনরুল্লেখ বাহুল্য মাত্র। ) ভারতের ধৰ্ম্মের প্রভাব কোথায় ন বিস্তৃত ছিল ? সূক্ষ-দৃষ্টিতে দেখিতে গেলে, প্রাচ্যে ও প্রতীচ্যে সৰ্ব্বত্র ভারতের ধৰ্ম্মের প্রভাব বিস্তৃত হয় । তবে, সেই সূত্রে কোন দেশে কিরূপভাবে বাণিজ্য-সম্বন্ধ স্থাপিত হয়, সাধারণতঃ তাহ নির্ণয় করা সুকঠিন। বৌদ্ধ-ধৰ্ম্মের অভু্যদয়ের পূৰ্ব্বে ভারতীয় দ্বীপ-পুঞ্জে ব্রাহ্মণ্য-ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যসম্বন্ধ স্থাপিত হয়। দুর অতীতের গভীর অন্ধকারের মধ্যে সেইরূপ দুই একটী ক্ষীণ-রশ্মি অধুনা নয়নপথে পতিত হইয়া থাকে। বৌদ্ধ-ধর্মের প্রভাব-প্রতিপত্তির দিনে পৃথিবীর চারিদিকে বৌদ্ধ-ধর্মের বিমল জ্যোতিঃ বিস্তৃত হইয়াছিল। কিন্তু অধিকাংশ দেশেই এখন বৌদ্ধ-ধৰ্ম্মের জ্যোতিঃ নিৰ্ব্বাপিত হইয়াছে । পৃথিবীর যে দুই-একটা জনপদ আজিও বৌদ্ধধৰ্ম্মের মহিমায় মহিমান্বিত হইয়া আছে, তাহাদের মধ্যে কচিৎ কোথাও প্রাচীন-ভারতের বাণিজ্যের স্মৃতি জড়িত হইয়া রহিয়াছে ! তন্মধ্যে, চীন জাপান প্রভূতি প্রাচ্যদেশে সেই স্মৃতি একটু উজ্জ্বল দেখিতে পাই । খৃষ্ট-জন্মের পূর্ববৰ্ত্তিকালে চীনদেশে বৌদ্ধ-ধৰ্ম্ম-প্রচারক