পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌরাণিকী গ্রামের নিকট উপনীত হইলেন। তখন বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের পদ জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন, “আজ্ঞা দাও, একবার আমার দুঃখিনী মাতাকে দেখিয়া যাইব, আমার মা পাগলিনী হইয়া আছেন ।” লক্ষ্মীন্দর বলিলেন- “চল আমরা ছদ্মবেশে নিছনিগ্রামে যাই ।” তখন বেহুলা আনন্দে কাষায় বস্ত্র পরিয়া মাথার কেশে জটা বঁাধিলেন, অঙ্গে বিভুতি মাখিয়া, কৰ্ণে শঙ্খের কুণ্ডল পরিলেন। লক্ষ্মীন্দর যোগী সাজিয়া সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন । নিছনিগ্রামের লোকেরা বলাবলি করিতে লাগিল, “এমন যোগী ও যোগিনী আমরা কখনও দেখি নাই, ঠিক যেন শিব ও ভবানী !” বারুইপাড়া অতিক্রম করিয়া, বেহুল সায়-বোনের বাড়ীতে উপনীত হইলেন। পিতৃগৃহ দেখিয়া বেহুলার চক্ষু বারংবার অশ্রুপূর্ণ হইতে লাগিল। বেহুলা মন্থর-গতিতে পুত্র মধ্যে প্রবেশ করিলেন! তখন অমলা হরি-সাধুর ভাত স্বর্ণ-থালায় লইয়া রন্ধন গৃহ হইতে বহির্গত হইতেছিলেন। অপূর্ব যোগী ও যোগিনী-মূৰ্ত্তি দেখিয়া ভাতের থালা হাত হইতে পড়িয়া গেল। তিনি উচ্চৈঃস্বরে কঁাদিয়া উঠিলেন, বলিলেন, “যোগিনী আমার বেহুলারই মত। মা যোগিনি, আমার একটিমাত্র কন্যা পাগলিনীর মত স্বামীর মৃতদেহ বক্ষে লইয়া ভেলায় ভাসিয়া গিয়াছে, তাহার শোকে দেশের পশুপক্ষী ঝুরিয়া মরিতেছে। অশ্বশালে অশ্ব ও হাতীশালে হাতী বেহুলার নাম শুনিলে খাদ্য দ্রব্য খায় না, ঝাবু ঝবৃ করিয়া তাদের চক্ষের জল পড়িতে থাকে, আমার মত পাষাণী আর নাই। তুমি যে হও সে হও, আমি তোমায় ছাড়িয়া দিব না।” এই বলিয়া উন্মাদিনীর মত অমলা বেণেনী, যোগিনীকে বক্ষে লইয়ামূৰ্ছিত হইলেন। তখন অবিরল ধারে বেহুলার চক্ষের জল পড়িতেছিল, লক্ষ্মীন্দরও তখন দাড়াইয়া দাড়াইয়া কঁাদিতেছিলেন। অমলার মোহ ভঙ্গ হইলে, বেহুলা 8