পাতা:প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(১৮৭৪-১৯২২) এই খেলা খুবই পছন্দ করতেন। এই খেলাটি ছিল উঁচু ঠাটবাটের একটা প্রতীক। এই খেলাটা WLPA বলবৎ হবার পরও একইরকম রমরম করে চলেছে। এক্ষেত্রে শুধু গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হল নব্য ধনী কৃষক, ধনী শহুরে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক এবং কর্মচারীরা। যাদের খেলার একটা উদ্দেশ্য হল জায়গীরদারদের এবং উচ্চবর্ণের মারাঠা পরিবারের সমতুল্য জাতে ওঠা। শিকারিরা উচ্চ শক্তিসম্পন্ন লাইসেন্সড রাইফেল এবং শটগান ব্যবহার করতো খেলা, ফসল সংরক্ষণ এবং আত্মরক্ষার জন্য। তারা স্থানীয়দের ভাড়া করতো ঝোপঝাড়ে লুকোনো জায়গা থেকে শুয়োর তাড়ানোর জন্য বা শিকারিরা তাকে হত্যা করার জন্য আগে থেকে যে স্থানে অপেক্ষা করবে কৃষিজমি থেকে সেইস্থানে শুয়োরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবার জন্য। এই শিকার সংগঠিত হয় বার্কিং ডিয়ার বা কাকর হরিণ, সম্বর হরিণ, খরগোস, বনময়ূরী ইত্যাদিদের ক্ষেত্রেও। এই মাংস ভাগ হয় এবং বিতরিত হয় বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার পরিজনদের মধ্যে। যারা এই শিকারে সাহায্য করেছে, তাদেরকেও এই মাংসের ভাগ দেওয়া হয়।

এই আইনভঙ্গকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান। যিনি ফুর্তির জন্য কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেছিলেন ১৯৯৮ সালে। তাঁকে যোধপুর কোর্ট WLPA-এর ৫১ নম্বর ধারায় দণ্ডিত করেছিল। যার সর্বোচ্চ সাজা হল ৬ বছর পর্যন্ত কারাবাস এবং সর্বনিম্ন সাজা হল ১ বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু ২০২১ সালে, তিনি এখনো স্বাধীনভাবে তার ভক্তদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই ভক্তরাই সালমানকে হাতেনাতে ধ’রে ফেলা বিশনোইদের অভিসম্পাত করেছে। কিন্তু দুর্বল এবং গরীব মানুষরা আইন নিয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে। এ দেশের চাষিরা, যারা বনশুয়োরের দ্বারা ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয় নানাভাবে— কখনো ফসলের ক্ষতি, কখনো কখনো মানুষের আহত হওয়া আবার কখনো মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তাই, মানুষ হয়তো আইনকে কেবল উপেক্ষা করে। কেরালার একটা রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে যেসব গ্রামে গ্রামবাসীরা কৌমগতভাবেই বনশুয়োর শিকার করে, সেখানে বনশুয়োরের দ্বারা ক্ষতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্য সর্বত্র এই ক্ষতি ক্রমবর্ধমান। WLPA ভাঙার একটা জ্বাজ্জল্যমান উদাহরণ হল উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি, যেখানে আইনকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সমস্ত প্রজাতির পাখি ও স্তন্যপায়ীর বিপুল ব্যাপ্ত শিকার হতে দেখেছি আমি ব্যক্তিগতভাবে।

বীরাপ্পন

জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণ আইন লঙ্ঘনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর উদাহরণ হল কুজ মুনিসামি বীরাপ্পন (১৯৫২-২০০৪), যে ডাকাত ৩৪ বছর ধ’রে সক্রিয় ছিলেন; যিনি বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের অপহরণ ক’রে মুক্তিপণ দাবি করতেন। তিনি চন্দনকাঠ চোরাচালান এবং হাতি পাচারের জন্য তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং কেরালা এই তিনটি রাজ্যে অভিযুক্ত ছিলেন। তিনি ২০০০ হাতি, ১৬ কোটি টাকার হাতির দাঁত এবং ৪৩ কোটি টাকা মূল্যের চন্দনকাঠ পাচার করেছেন। তাঁকে খোঁজা হচ্ছিল ১৮৪ জন মানুষকে খুন করার অপরাধে যার অর্ধেক হল পুলিশ আধিকারিক এবং বন আধিকারিক, বিখ্যাত রাজনীতিক এবং বিখ্যাত ব্যক্তি, যাদেরকে অপহরণ করা হয়েছিল মুক্তিপণের জন্য। বীরাপ্পনকে পাকড়াও করার যুদ্ধে কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুর সরকারের মোট খরচ হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। তিনি সুদীর্ঘকাল ধ’রে এমনটা করতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র স্থানীয় গ্রামবাসীদের বহুধাবিস্তৃত সমর্থনের জন্য। ১৯৮০-র শুরুর দিকে, আমি জানতাম, তামিলনাড়ুর ইরোডে কিছু প্রকৃতি সংরক্ষণকারী বীরাপ্পনকে নিন্দা করে একটি বিক্ষোভ প্রদর্শন

25