পাতা:প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করতে চেয়েছিলেন। তাদেরকে সেই পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয় কারণ বহু স্থানীয় মানুষ তাদের বিক্ষোভে হামলা করার হুমকি দিয়েছিল এই ব’লে যে বনাধিকারিকরা তাদের শুধুই হেনস্থা করেছে, তাদেরকে সুস্থভাবে উপার্জন করতে এবং বাঁচতে দেয়নি। তারা বীরাপ্পনের প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ বীরাপ্পন তাদের ভীষণ প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান এবং রোজগার দিয়েছিলেন।

অসাংবিধানিক আইন

WLPA আইনে, মানুষ স্বাধীনভাবে লুঠতরাজরত প্রাণীদের তাড়াতে পারবেন না; এমনকি তাদের বাড়ি বা ফসলের জমি থেকে প্রাণীদের তাড়াতে গেলেও সরকারি অনুমতি নিতে হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০০ এবং ১০৩ নং ধারা অনুযায়ী স্বেচ্ছায়/ইচ্ছাকৃতভাবে কারুর মৃত্যুর কারণ হওয়া অথবা দুষ্কৃতিদের/অপরাধীদের অন্য কোন ক্ষতি করতে পারে যদি (১) একজন অন্যায়কারীর করা একটি হেনস্থা/অপরাধ/আঘাতের ফলে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের যথেষ্ট ভয় থাকে। (২) যদি এই অনিষ্টকারী তাদের বাড়ি এবং সম্পত্তিতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে অথবা ডাকাতি করে। বনশুয়োর কখনো সখনো মানুষ মারে, তারা নিয়মিত চাষিদের জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে, তার উৎপাদিত দ্রব্য চুরি করে। হাতিরাও তাই করে এবং বাঘেরা মানুষ মারে এবং চাষিদের কুকুর এবং অন্যান্য গৃহপালিত পশু লুঠ করে। আমার দুই ব্যক্তিগত বন্ধু, একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক এবং অবসরপ্রাপ্ত উচ্চন্যায়ালয়ের বিচারক আমায় বলেছিলেন যে WLPA স্পষ্টতই সাংবিধানিকভাবে বৈধ নয়।

বিশ্বময় বন্যপ্রাণ ব্যবস্থাপনা

ভারতবর্ষ বাদ দিয়ে কোনো দেশেই ন্যাশনল পার্ক, বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য এবং ক্রীড়া উদ্যানের বাইরে শিকার করা নিষিদ্ধ নয়। নেকড়ের মতো কিছু বিপন্ন প্রজাতিদের শিকার করা সর্বত্রই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু এমনকি এটাও সার্বজনীন নয়। আমেরিকার স্টেট অফ আলাস্কায় নেকড়ে শিকারকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ায় সদর্থক উৎসাহের (positive incentive) একটা ব্যবস্থা আছে। অস্ট্রেলিয়ার ভেড়াদের খামারের মালিকরা ক্যাঙারু শিকার করে ভেড়ার প্রতিযোগী হিসাবে। সরকার তাদের কাছে ডাক বা bid করতেন নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্যাঙারুকে তাদের খামারে থাকতে দেওয়ার বিনিময়ে কত টাকা বিনিময়মূল্য দিতে হবে, তা জানতে চেয়ে। সবচেয়ে কম ডাকটিকেই গ্রহণ করা হয় স্বচ্ছ ভেরিফিকেশনের মধ্যে দিয়ে। স্ক্যাণ্ডেনেভিয়ান দেশগুলি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিষয়ে সত্যিকারের একটি যুক্তিসঙ্গত পন্থা গ্রহণ করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে যে নবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের দীর্ঘকালীন ব্যবহারের পক্ষে শিকার একটি বিচক্ষণ পদক্ষেপ। এই দেশগুলি সারা পৃথিবীতে পরিবেশগত কর্মক্ষমতা এবং সুখের সূচক— উভয় ক্ষেত্রেই সেরার শিরোপা পেয়েছে। সেই একই সময়ে একইসঙ্গে এইসব দেশের বহু বহু হিমায়ক বা ফ্রিজারেই রেইন ডিয়ার নামক হরিণ, শিয়াল কিংবা মুজ নামক হরিণের মাংস ঠাসা থাকে। স্যুইডেনের আইনগুলোর মধ্যে এইসব বিধান রয়েছে। (১) জীবন্ত বন্যপ্রাণী কারুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, কিন্তু জমিমালিকরা তাদের জমিতে শিকার করতেই পারে এবং অন্য শিকারিদের লিজও দিতেই পারে। (২) ক্রীড়ার মাংস একটি বাণিজ্যিক পণ্য যা খোলা বাজারে বিক্রি হতে পারে এবং যাকে এই সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করা হয়। (৩) স্থানীয় দায়বহনকারী বা স্টেকহোল্ডারদের ক্ষমতায়ণ করা হয়, সিদ্ধান্ত

26