পাতা:প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একইভাবে, Kerala Ecofragile Lands Act (২০০৩)-এর অভিজ্ঞতা মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে সংরক্ষণ বলতে বোঝায় জবরদস্তি এবং অন্যায় দাবিদাওয়া। এমন অভিযোগ রয়েছে যে দানবীয় EFL আইন কোনোরকম বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়াই বনদপ্তরকে সংরক্ষিত এলাকার কাছাকাছি ইচ্ছেমতো যে কোন জমিকে ‘পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর’ আখ্যা দেবার অনুমতি দিয়েছিল। সমস্ত ব্যক্তিগত অধিকার তখনই শেষ হয়ে গেছে। ৩৭,০০০ একর জমি থেকে কোনোরকম ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ৮,০০০-এর ওপর চাষি উৎখাত হয়েছে। গ্রামসভাগুলো এই জমিগুলো চিহ্নিতকরণে আদৌ যুক্ত ছিল না। বনদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জমি অধিগ্রহণ করা হবে ক্ষেত্র-পরিদর্শন ছাড়াই। আপাতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসাররা তখন থেকে আবার জোর ক’রে ঘুষ আদায় করতে থাকে যখন WGEEP রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। WGEEP রিপোর্টের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য কায়েমি স্বার্থের দ্বারা এটিকে কাজে লাগানো হয়েছিল।২১

ভারতীয় ঐতিহ্য শাসনের চারটি অস্ত্র সম্পর্কে কথা বলে— সাম বা মীমাংসা, দাম বা পুরষ্কার, দণ্ড বা শাস্তি এবং ভেদ অথবা মানুষকে বিভক্ত করা। আজকের পরিবেশগত সংরক্ষণ-এর শাসন প্রোথিত আছে দণ্ডের ওপর, বনদপ্তরের অত্যাচারের ওপর এবং ভেদাভেদ বা প্রতিটি মানুষকে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ানোর ওপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চাষিদের কীটনাশক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হল, যা মৎস্যজীবীদের স্বার্থবিরোধী। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে সাধারণ মানুষ পরিবেশগত সংরক্ষণ অর্জন করেছেন বহু শতাব্দী ধ’রে। সেই মানুষরাই তাদের পরিবেশ, তাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছেন। ১৯৮৮-তে রাজস্থানের বিশনোইরাই আশঙ্কা করেছিল যে সালমান খান কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেছে এবং বছরের পর বছর অবিশ্বাস্যভাবে তারা সেই মামলা চালিয়ে চলেছে। গোয়া তাদের সবুজ আচ্ছাদন ধ’রে রাখতে পেরেছে তাদের গ্রামের কৌম “communidade” ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে। তাদেরকে মারাত্মক ফলাফল ভোগ করতে হয়েছে সাধারণ সম্পত্তিকে কায়েমী স্বার্থের কবল থেকে রক্ষা করতে। আমার বন্ধু বিস্মার্ক দায়াল স্থানীয় “communidade”-এর প্রেসিডেণ্ট হিসেবে অত্যন্ত সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে মারা যান। উনি একটি পাহাড় দখল করে পাঁচতারা হোটেল তৈরির প্রতিরোধ করছিলেন। অতি সাম্প্রতিককালে বনদপ্তর চুপ করে থাকলেও, গোয়ার মানুষরাই মোল্লাম ন্যাশনল পার্ক দিয়ে যে রেলওয়ে লাইন যাচ্ছিল তার প্রতিবাদ করেছিলেন।২২ এর চেয়েও খারাপ হল— বনদপ্তর প্রস্তাব দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের সংরক্ষিত অরণ্যের ৪০% শিল্প কারখানাকে হস্তান্তরিত করবে জঙ্গলসাফ করবার জন্য, পরিবর্তে কিছু বিদেশি, দ্রুত বেড়ে ওঠা প্রজাতির গাছের বাগান করবে। এখানেও সেই সাধারণ মানুষরাই প্রতিবাদ করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে বাধ্য করেছেন রাজি না হ’তে।২৩

পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি মানুষের বিদ্বেষ শুধুমাত্র নচ্ছার পুঁজিপতিদের এবং দুর্নীতিগ্রস্ত বাবুদের এবং নেতাদের সুবিধেই দেয়, যারা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ করে এবং নষ্ট ক’রে দ্রুত বিপুল অর্থ উপার্জন করে। যার মধ্যে রয়েছে বহু দূষক শিল্প কারখানা, খনি, খাদান নিয়ন্ত্রকরা, রিয়েল এস্টেট গোষ্ঠী এবং জঙ্গলভিত্তিক কারখানা। ২০২০ সালের মে মাসে একটা প্রাসঙ্গিক ঘটনায় দেখা যাবে, ভয়ানক বেদনাদায়ক করোণাসম্পর্কিত লকডাউনের শেষে এক বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী নির্মাণ শ্রমিক ব্যাঙ্গালোর ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ইয়াদুরাপ্পা ট্রেন বাতিল করে দেন এবং নির্মাণ শিল্পের মজুরদের যৎসামান্য মজুরি বহাল রাখার স্বার্থে তাদেরকে ব্যাঙ্গালোরেই ফিরে যেতে বাধ্য করেন। আমাদের অর্থনীতির পণ্ডিতরা ধনী ও ক্ষমতাবানদের সাধুবাদ দিতেই থাকবেন এবং তাদের সেইসব পৃষ্ঠপোষণাকে ‘সংস্কার’ আখ্যা দেবেন। তারা নষ্ট পরিবেশের ক্ষতিগ্রস্তদের/অত্যাচারিতদের বন্যপ্রাণীর হামলার মুখে ঠেলে

28