পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 অক্ষয়। বল কি? আমার রাজ্যকাল থেকে জগতে নূতন শাল প্রচলিত হবে? এই বলিয়া অত্যন্ত সাড়ম্বর তানসহকারে ভৈরবীতে গান ধরিলেন—

তুমি আমায় করবে মস্ত লোক!
দেবে লিখে রাজার টকে প্রসন্ন ঐ চোখ!

 শৈলবালার প্রস্থান। ভৃত্য আদিষ্ট হইয়া দুটি ভদ্রলোককে উপস্থিত করিল। একটি বিসদৃশ লম্বা, রোগা, বুট জুতাপরা, ধুতি প্রায় হাঁটুর কাছে উঠিয়াছে, চোখের নীচে কালি পড়া, ম্যালেরিয়া রোগীর চেহারা; বয়স বাইশ হইতে বত্রিশ পর্য্যন্ত যেটা খুসি হইতে পারে। আর একটি বেঁটেখাটো, অত্যন্ত দাড়ি গোঁফসঙ্কুল, নাকটি বটিকাকার, কপালটি ঢিবি, কালোকোলো, গোলগাল।

 অক্ষয় অত্যন্ত সৌহার্দ্য সহকারে উঠিয়া অগ্রসর হইয়া প্রবলবেগে শেক্হ্যাণ্ড করিয়া দুটি ভদ্রলোকের হাত প্রায় ছিঁড়িয়া ফেলিলেন। বলিলেন, আসুন মিষ্টার ন্যাথানিয়াল, আসুন মিষ্টার জেরেমায়া, বসুন বসুন! ওরে বরফ জল নিয়ে আয়রে, তামাক দে!

 রোগ লোকটি সহসা বিজাতীয় সম্ভাষণে সঙ্কুচিত হইয়া মৃদুস্বরে বলিল, আজ্ঞে আমার নাম মৃত্যুঞ্জয় গাঙ্গুলি।

 বেঁটে লোকটি বলিল—আমার নাম শ্রীদারুকেশ্বর মুখোপাধ্যায়!

 অক্ষয়। ছি মশায়! ও নামগুলো এখনো ব্যবহার করেন বুঝি? আপনাদের ক্রিশ্চান নাম?

 আগন্তুকদিগকে হতবুদ্ধি নিরুত্তর দেখিয়া কহিলেন—এখনো বুঝি নামকরণ হয়নি? তা তাতে বিশেষ কিছু আসে যায় না, ঢের সময় আছে!

 বলিয়া নিজের গুড়গুড়ির নল মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে অগ্রসর করিয়া দিলেন। সে লোকটা ইতস্ততঃ করিতেছে দেখিয়া বলিলেন বিলক্ষণ।