পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
১৯

আমার সামনে আবার লজ্জা! সাত বছর বয়স থেকে লুকিয়ে তামাক খেয়ে পেকে উঠেছি। ধোঁয়া লেগে লেগে বুদ্ধিতে ঝুল পড়ে গেল! লজ্জা যদি করতে হয় তাহলে আমার ত আর ভদ্র সমাজে মুখ দেখাবার জো থাকে না!

 তখন সাহস পাইয়া দারুকেশ্বর মৃত্যুঞ্জয়ের হাত হইতে ফস্ করিয়া নল কাড়িয়া লইয়া ফড়্ ফড়্ শব্দে টানিতে আরম্ভ করিল! অক্ষয় পকেট হইতে কড়া বর্ম্মা চুরোট বাহির করিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে দিলেন। যদিচ তাহার চুরোট অভ্যাস ছিল না, তবু সে সদ্যস্থাপিত ইয়ার্কির খাতিরে প্রাণের মায়া পরিত্যাগ করিয়া মৃদুমন্দ টান দিতে লাগিল এবং কোন গতিকে কাশি চাপিয়া রাখিল।

 অক্ষয় কহিলেন—এখন কাজের কথাটা সুরু করা যাক্! কি বলেন?

 মৃত্যুঞ্জয় চুপ করিয়া রহিল, দারুকেশ্বর বলিল—তা’নয়ত কি? শুভস্য শীঘ্রং!—বলিয়া হাসিতে লাগিল, ভাবিল ইয়ার্কি জমিতেছে।

 তখন অক্ষয় গম্ভীর হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, মুর্গি না মাট্ন?

 মৃত্যুঞ্জয় অবাক্ হইয়া মাথা চুলকাইতে লাগিল। দারুকেশ্বর কিছু না বুঝিয়া, অপরিমিত হাসিতে আরম্ভ করিল। মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুব্ধ লজ্জিত হইয়া ভাবিতে লাগিল, এরা দুজন ত বেশ জমাইয়াছে, আমিই নিরেট বোকা!

 অক্ষয় কহিলেন,—আরে মশায়, নাম শুনেই হাসি! তা হলেত গন্ধে অজ্ঞান এবং পাতে পড়্লে মারাই যাবেন! তা যেটা হয় মনস্থির করে বলু—মুর্গি হবে না মাট্ন হবে?

 তখন দুজনে বুঝিল আহারের কথা হইতেছে। ভীরু মৃত্যুঞ্জয় নিরুত্তর হইয়া ভাবিতে লাগিল। দারুকেশ্বর লালায়িত রসনায় একবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিল!