পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৬৯

প্রকাশ্যভাবে তোমাদের সভার মধ্যে কেন তাকে গ্রহণ করবে না? আমি তোমাদের কৌমার্য্য সভার কেন সভ্য না হব?

 নিষ্কলুষচিত্ত চন্দ্রমাধবের কাছে ইহার কোন উত্তর ছিল না। তবু দ্বিধাকুণ্ঠিতভাবে বলিতে লাগিলেন—অন্য যাঁরা সভ্য আছেন―

 নির্ম্মল কথা শেষ না হইতেই বলিয়া উঠিল—যাঁরা সভ্য আছেন, যাঁরা ভারতবর্ষের হিতব্রত নেবেন, যাঁরা সন্ন্যাসী হতে যাচ্ছেন—তাঁরা কি একজন ব্রতধারিণী স্ত্রীলোককে অসঙ্কোচে নিজের দলে গ্রহণ করতে পারবেন না? তা যদি হয় তাহলে তাঁরা গৃহী হয়ে ঘরে রুদ্ধ থাকুন্ তাঁদের দ্বারা কোন কাজ হবে না!

 চন্দ্রমাধববাবু চুলগুলোর মধ্যে ঘন ঘন পাঁচ আঙুল চালাইয়া অত্যন্ত উস্কোখুস্কো করিয়া তুলিলেন। এমন সময় হঠাৎ তাঁহার আস্তিনের ভিতর হইতে হারা বোতামটা মাটিতে পড়িয়া গেল। নির্ম্মলা হাসিতে হাসিতে কুড়াইয়া লইয়া চন্দ্রমাধব বাবুর কামিজের গলায় লাগাইয়া দিল— চন্দ্রমাধববাবু তাহার কোন খবরই লইলেন না―চুলের মধ্যে অঙ্গুলি চালনা করিতে করিতে মস্তিষ্ক কুলায়ের চিন্তাগুলিকে বিব্রত করিতে লাগিলেন।

 চাকর আসিয়া খবর দিল, পূর্ণবাবু আসিয়াছেন। নির্ম্মলা ঘর হইতে চলিয়া গেলে তিনি প্রবেশ করিলেন। কহিলেন—চন্দ্রবাবু, সে কথাটা কি ভেবে দেখ লেন? আমাদের সভাটিকে স্থানান্তর করা আমার বিবেচনায় ভাল হচ্চে না!

 চন্দ্রবাবু। আজ আর একটি কথা উঠছে, সেটা পূর্ণবাবু তোমার সঙ্গে ভাল করে আলোচনা করতে ইচ্ছা করি। আমার একটি ভাগ্নী আছেন বোধ হয় জান?

 পূর্ণ। (নিরীহভাবে) আপনার ভাগ্নী?

 চন্দ্র। হাঁ, তার নাম নির্ম্মলা। আমাদের চিরকুমার সভার সঙ্গে তার হৃদয়ের খুব যোগ আছে!