১৫২ বুড় বয়সে কথা। পরিপূর্ণ, সে বিশ্বাসে দৃঢ়, সৌহার্দো স্থির, অপরাধেও প্রসন্ন, সে বন্ধুহৃদয় কই ? নাই। কার দোষে নাই ? আমার দোষে নহে। বন্ধুরও দোষে নহে। বয়সের দোষে অথবা যমের দোষে । তাহাতে ক্ষতি কি ? এক আসিয়াছি, এক ষাইল—তাছার ভাবনা কি ? এ লোকালয়ের সঙ্গে আমার বনিয়া উঠিল না— আচ্ছা—রোসোদ। পৃথিবি ! তুমি তোমার নিয়মিত পথে আবর্তন করিতে থাক, আমি আমার অভীষ্ট স্থানে গমন করি —তোমার আমায় সম্বন্ধ রহিত হইল—তাহাতে, হে মূরি জড়পিণ্ডগৌরবপীড়িতে বসুন্ধরে ! তোমারই বা ক্ষতি কি, আমারই বা ক্ষতি কি ? তুমি অনন্ত কাল, শূন্যপথে ঘুরিবে, আমি আর অল্প দিন ঘুরিব মাত্র। তার পরে তোমার কপালে ছাই গুলি দিয়া, যার কাছে সকল জালা জুড়ার, তার কাছে গিয়া সকল জালা জুড়াইব । তবে, স্থির হইল এক প্রকার ষে বুড়া বয়সে পড়িয়াছি। এখন কর্তব্য কি ? “পঞ্চাশোর্দ্ধে বনং ব্রজেৎ ?” এ কোন গণ্ডমুখের কথা। আবার বন কোথা ? এ বয়সে, এই অট্টালিকাময়ী লোকপূর্ণ। আপণীসমাকুল নগরীই বন। কেন না হে বর্ষীয়া পাঠক ! তোমার আমার সঙ্গে আর ইহার মধ্যে কাহারও সহৃদয়ত নাই। বিপদকালে কেহ কেহ আসিয়া বলিতে পারে, যে “বুড়া! তুমি অনেক দেখিরছি, এ বিপদে কি করিব বলির দাও,—” কিন্তু, সম্পদ কালে কেহই বলিবে ন, “বুড়া, আজি আমার আনন্দের দিন, তুমি আসিয়া আমাদিগের উৎসব বুদ্ধি কর!” বরং আমোদ আহলাদ কালে বলিবে, “দেখ ভাই, যেন বুড়া বেটা জানিতে না পারে।” তবে আর অরণ্যের বাকি কি ?
পাতা:প্রবন্ধ পুস্তক-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬১
অবয়ব