পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2NNR is: SG সম্পবন্ধেও তিনি হচ্ছেন এ যাগের সব প্রথম এবং সব প্রধান মহাজন। যে শাস্ত্রের রায়কে সেই বেদান্তশাস্ত্রের আবিস্তকতা বললেও অত্যুক্তি হয় না। আপনারা শানে আশ্চর্ষ হয়ে যাবেন যে, সেকালে একদল পণ্ডিত তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন যে, উপনিষদ বলে সংস্কৃত ভাষায় কোনো শাস্ত্রই নেই, ঈশ কেন কণ্ঠ প্রভাতি নাকি তিনি রচনা করেছিলেন। এ অভিযোগ এত লোকে সত্য ব’লে বিশ্ববাস করেন যে, রামমোহন এই মিথ্যা অভিযোগের হাত থেকে নিস্কৃতি লাভ করবার জন্য প্রকাশ্যে এই জবাব দিতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, এই কলিকাতা শহরে শ্রীযক্ত মাতৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকারের বাড়িতে গেলেই সকলে দেখতে পাবেন যে, বেদান্তশাস্ত্রের সকল পথিই তাঁর ঘরে মজত আছে। বিশেষ করে মাতৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকারের নাম উল্লেখ করবার কারণ এই যে, তিনি ছিলেন রামমোহন রায়ের বিপক্ষদলের সবােগ্রগণ্য পন্ডিত। স্কচ দার্শনিক ডুগালড স্টয়ার্ট Dugald Stewart বলেছিলেন যে, সংস্কৃত বলে কোনো ভাষাই নেই, ইংরেজদের ঠকাবার জন্য ব্রাহ্মণেরা ঐ একটি জাল ভাষা বার করেছে। এ কথা শনে এককালে আমরা সবাই হামাতুম, কেননা সেকালে আমৱা জানতুম না যে, এই বাংলাদেশেই এমন একদল টোলের পন্ডিত ছিলেন, যাঁদের মতে বেদান্ত বলে কোনো শাস্ত্রই নেই, বাঙালিদের ঠকাবার জন্য রামমোহন রায় ঐ একটি জাল শাস্ত্র তৈরি করেছেন। এই জালের অপবাদ থেকে রামমোহন রায় আজও মন্তি পান নি। আমাদের শিক্ষিতসমাজে আজও এমন-সব লোকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় যাঁদের বিশ্ববাস মহানিবাণতন্ত্র রামমোহন রায় এবং তাঁর গর, হরিহরানন্দনাথ তীৰ্থস্বামী এই উভয়ে মিলে জাল করেছেন। এরা ভালে যান যে, দলিল লোকে জাল করে শােধ আদালতে পেশ করবার জন্য। এই কারণেই টােলের পন্ডিতমহাশয়েরা দত্তকচন্দ্রকা নামক একখানি গোটা সমিতিগ্রন্থ রাতারাতি জাল করে ইংরেজের আদালতে পেশ করেছিলেন। সে জাল তুখন ধরা পড়ে নি, পড়েছে এদানিক। ঈশ কেন কঠ, এমন-কি, মহানিবাণতন্ত্র পর্যন্ত, কোনো আদালতে গ্রাহ্য হবে না, ও-সবই irrelevant ব’লে rejected হবে। সতরাং রামমোহন রায়ের পক্ষে মোক্ষশাস্ত্র জাল করবার কোনোই প্রয়োজন ছিল না। তবে যে লোকে মহানিবােণকে জাল মনে করে, তার কারণ তারা বোধ হয় দত্তকচন্দ্রকাকেও genuine মনে করে। এই শ্রেণীর বিশ্ববাস এবং অবিশবাসের মলে আছে একমাত্র জনশ্রীতি। এই একশো বৎসরের শিক্ষাদীক্ষার বলে আমাদের বিচারবন্ধি যে আজও ফণা ধরে ওঠে নি, তার কারণ উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে সে বন্ধি স্বল্পজ্ঞানের সংকীর্ণ গন্ডির ভিতর আটকে পড়েছিল, আর এই বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে সে বন্ধি আমাদের অতিজ্ঞানের চাপে মাথা তুলতে পারছে না। আমি আশা করি, একবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে বাঙালির বিদ্যার বোঝা কতকটা লঘ হয়ে আসবে, আর তখন বাঙালির বন্ধি সবচ্ছদে খেলে বেড়াবার একটি অবসর পাবে।