পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ş\ხ Nს প্রবন্ধসংগ্ৰহ সাধসমাজের লোকেরা কাহেনও না শানেনও না, কিন্তু লিখেন এবং পড়েন, সেই ভাষা সাধভাষা। সতরাং ভালো হোক মন্দ হোক, যে ভাষায় লেখাপড়া করা লোকের অভ্যাস হয়ে গেছে, সেই অভ্যাসবশতই সেই ভাষায় লেখাপড়া করা লোকের পক্ষে অতি সহজ। কিন্তু যা করা সোজা তাই যে করা উচিত, এরােপ আমার বিশ্ববাস নয়। সাধ বাংলা পরিত্যাগ করে বাংলা ভাষায় লিখতে পরামর্শ দিয়ে আমি পরিশ্রমকাতর লেখকদের অভ্যস্ত আরামের ব্যাঘাত করতে উদ্যত হয়েছি, সতরাং এ কায্যের জন্য আমি যে তাঁদের বিরাগভাজন হব তা বেশ জানি। ‘নব্য সাহিত্যিক’দের বোলতার চাকে আমি যে ঢিল মারতে সাহস করেছি। তার কারণ, আমি জানি তাদের আর যাই থাকা হল নেই। বড়েজোর আমাকে শািন্ধ লেখকদের ভিনভনানি সহ্য করতে হবে। সে যাই হোক, ঢাকা রিভিউ-এর সম্পাদক যে আপত্তি উত্থাপন করেছেন, তার একটা বিচার হওয়া আবশ্যক। আমি ভাষাতত্ত্ববিদ নই, তবও আমার মাতৃভাষার সঙ্গে যেটকু পরিচয় আছে, তার থেকেই আমার এইটকু জ্ঞান জন্মেছে যে, মাখের কথা লেখায়৷ পথান পেলে সাহিত্যের ভাষা প্রাদেশিক কিংবা গ্ৰাম্য হয়ে উঠবে না। বাংলা ভাষার কাঠামো বজায় না রাখতে পারলে আমাদের লেখার যে উন্নতি হবে না, এ কথা নিশিচত। কিন্তু সেই কাঠামো বজায় রাখতে গেলে ভাষারাজ্যে বঙ্গভঙ্গ হবার কোনো সম্পভাবনা আছে কি না, সে বিষয়ে একটা আলোচনা দরকার। আমি তকটা উত্থাপন করে দিচ্ছি, তার সিদ্ধান্তের ভার যাঁরা বঙ্গ ভাষার অস্থিবিদ্যায় পারদর্শী তাঁদের হস্তে ন্যস্ত থাকিল। ভাষায় প্রাদেশিকতা প্রাদেশিক ভাষা, অর্থাৎ dialect, এই নাম শনলেই আমাদের ভীত হবার কোনো কারণ নেই। সম্পভবত এক সংস্কৃত ব্যতীত গ্ৰীক ল্যাটিন প্রভাতি মত ভাষাসকল এক সময়ে লোকের মাখের ভাষা ছিল। এবং সেই সেই ভাষার সাহিত্য সেই যাগের লেখকেরা যচ্ছদ্ৰতং তািল্লখিতং এই উপায়েই গড়ে তুলেছেন। গ্ৰীক সাহিত্য ইউরোপীয় পন্ডিতদের মতে ইহজগতের সব শ্রেষ্ঠ সাহিত্য। কিন্তু এ অপােব সাহিত্য কোনোরাপ সাধভাষায় লেখা হয় নি, ডায়ালেকটেই লেখা হয়েছে। গ্রীক সাহিত্য একটি নয়, তিনটি ডায়ালেকটে লেখা। এইটেই প্রকৃষ্ঠািট প্রমাণ যে, মাখের ভাষায় বড়ো সাহিত্য গড় চলে। আধনিক ইউরোপীয় সাহিত্যও মৌখিক ভাষার অনসারেই লেখা হয়ে থাকে, “মাদ্রিত সাহিত্যের ভাষায় লেখা হয় না। পথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানকার উত্তর দক্ষিণ পাব পশ্চিমের লোকেরা ঠিক সমভাবেই কথা বলে। ইংল্যান্ড ফ্রান্স ইতালি প্রভাতি দেশেও ডায়ালেকটের প্রভেদ যথেষ্ট আছে। অথচ ইংরেজি সাহিত্যের ভাষা, ইংরেজ জাতির মাখের ভাষারই অনরোেপ। এর থেকেই বোঝা যায় যে, পাঁচটি ডায়ালেকটের মধ্যে কেবল একটিমাত্র সাহিত্যের সিংহাসন অধিকার করে। এবং তার কারণ হচ্ছে সেই ডায়ালেকটের সহজ শ্রেষ্ঠত্ব। ইতালির ভাষায় এর প্রমাণ অতি সপলিট। ইতালির সাহিত্যের ভাষার দটি নাম আছে ; এক lingua purgata অর্থাৎ শািন্ধ ভাষা, আর-এক lingua