পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবষের জিয়োগ্রাফি \O Ο Ο পথিবীর ঠিক উলটো। বিলাতে (গ্রীনউইচ) যখন দিনন্দ পাের, আমেরিকায় (নিউ অরলিনস) তখন রাতদােপাের। কেন এরকম হয়, সে কথা আর আজ বলব না; কারণ তা বোঝাতে হলে আমাকে মাটি থেকে আকাশে উঠতে হবে। এ ব্যাপারের ব্যাখ্যার ভিতর শােধ পথিবী নয়, সমযচন্দ্রকেও টেনে আনতে হবে। কেননা জিয়োগ্রাফি কতক হিসেবে অ্যাসট্ৰিনমির অন্তভূত। আর অ্যাসট্রনমি তোমরাও জান না, আমিও জানি নে । উত্তরখন্ড দক্ষিণখন্ড আর-একটি কথা শোনো। আমাদের শাস্ত্রকারদের মতে এই বিশব আদিতে ছিল ব্ৰহ্মাণড নামে একটি অন্ড। পরে ভগবান সেই অন্ডকে দিবখণড ক’রে তার উধৰ্ব্বখন্ড দিয়ে সবগ ও অধঃখন্ড দিয়ে পথিবী রচনা করেন, আর এ দায়ের মধ্যে আকাশ সম্মিট করেন। কিন্তু একালে আমরা পথিবীকে আধখানা ডিমের সঙ্গে তুলনা করি নে; আমরা বলি পথিবীর চেহারা ঠিক একটি কমলালেবর মতো। সেই কমলালোবটিকে যদি ঠিক মাঝখানে কাট, তা হলে এই কাটা জায়গাটার নাম হবে ইকোয়েটর; তার উপরের আধখানার নাম হবে উত্তর হেমিসফিয়ার, আর নীচের অংশটির নাম হবে দক্ষিণ হেমিসফিয়ার। পথিবীর এই দাই খন্ডের চরিত্র কোনো কোনো বিষয়ে ঠিক পরস্পরের বিপরীত। যথা উত্তরাখন্ডে যখন গ্রীষ্মমকাল, দক্ষিণাখন্ডে তখন শীতকাল। তার পর এই দাই খন্ডের গড়নেও ঢের প্রভেদ আছে। দক্ষিণাখন্ডে যতখানি মাটি আছে, উত্তরাখন্ডে প্রায় তার দিবগণ আছে। এর থেকে অনামান করতে পার যে, উত্তরাখন্ডের জলবায়র সঙ্গে দক্ষিণাখন্ডের জলবায়ার বিশেষ প্রভেদ আছে। আর জলবায়ার প্রভেদ থেকেই ভৌগোলিক হিসেবে এক দেশের সঙ্গে অপর দেশের প্রভেদ হয়। তোমরা সবাই জান যে, জল ও বায় স্থির পদাৰ্থ নয়- ও দইই চঞ্চল, ও দায়েরই স্রোত আছে। অপা ও মরতের স্রোতের মািল কারণ হচ্ছে সহযোির তেজ ; কিন্তু ক্ষিতি এই দাই স্রোতকে বাধা দিয়ে তাদের গতি ফিরিয়ে দিতে পারে। সতরাং পথিবীর যে খন্ডে বেশি পরিমাণ মাটি আছে, সে খন্ডের জলবায়র গতি, যে খন্ডে জল বেশি, সে দেশ হতে বিভিন্ন। ইউরেশিয়া এখন ইউরেশিয়ার বিশেষত্ব এই যে, এ মহাদেশটি সম্পণে পথিবীর উত্তরখন্ডের অন্তভুত। অপর পক্ষে আমেরিকা ও আফ্রিকার কতক অংশ উত্তরখণ্ডে ও কতক অংশ দক্ষিণখন্ডে অবস্থিত। এর ফলে আমরা যাকে সভ্যতা বাঁল, সে বস্তু ক্ষিত্যপতেজমরদ ব্যোমের কৃপায় ইউরেশিয়াতেই জন্মলাভ করেছে। আমেরিকা ও আফ্রিকা সভ্যতার জন্মভূমি নয়। ও দই মহাদেশে যে সভ্যতার আমরা সাক্ষাৎ পাই, সে সভ্যতা ইউরেশিয়া হতে আমদানি। সমগ্র আমেরিকা ও আফ্রিকার উত্তরদক্ষিণ ভাগ তো ইউরোপের উপনিবেশ। আর পরোকালে আফ্রিকার যে অংশে সভ্যতা প্রথম দেখা দেয়, সেই ইজিপ্ট উত্তরাখন্ডের অন্তভূতি ও এশিয়ার সংলগ্ন।